দুর্গাপুরের শিপুল সাহা পেশায় সবজিবিক্রেতা। রোজ সকাল হতেই দুর্গাপুরের সেন মার্কেটে সবজি বিক্রি করেন তিনি। সেই তাঁকেই টিকিট দিয়েছিল তৃণমূল। ভোটে জিতে এখন তিনি ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। কিন্তু তারপরেও নিজের পূর্ব পেশাকে এখনও ভুলতে পারেননি তিনি। তাই ভোর হতেই গলায় গামছা জড়িয়ে সবজি বিক্রেতাদের ভিড়ে বসে পড়েন তিনি। আর সেখানে বসে চিৎকার করে সবজি বিক্রি করতে দেখা যায় তাঁকে। বিক্রি শেষে সময় করে এলাকার মানুষকে পরিষেবা দিতে নিয়মিত নিজের কার্যালয়ে বসেন। পাশাপাশি দুপুর হতেই ওয়ার্ডের নানান কাজের বিষয় নিয়ে হাজির হন পুরসভাতেও। আর বিকেল হলেই এলাকায় বেরিয়ে পড়েন তিনি। স্থানীয়দের ঘরে ঘুরে ঘুরে তাঁদের সমস্যার কথা শোনেন। ফের সন্ধে থেকে নিজের কার্যালয়ে দলের কর্মীদের সঙ্গে আলোচনার পাশাপাশি এলাকার মানুষকে পরিষেবা দেন। শিপুল সাহার এই কাজে বেজায় খুশি তাঁর সহকর্মী থেকে শুরু করে স্থানীয় বাসিন্দারা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শিপুলবাবু উত্তর ২৪ পরগনার হাবড়ার বাসিন্দা। তাঁর বাবা জহর সাহা শস্য ডাল মিলের শ্রমিক ছিলেন। সংসার চালাতে শিপুলবাবু ৮ বছর বয়সে হাবড়া রেল স্টেশনে শশা বিক্রি করতেন। রুটিরুজির টানে তাঁর বাবা দুর্গাপুর এসেছিলেন ১৯৮২ সালে। এরপর ১৯৮৪ সালে শিপুলবাবুরা দুর্গাপুরে আসেন। দুর্গাপুর স্টেশন চত্বরের ফুটপাতে ফল বিক্রি করতে শুরু করেন জহরবাবু। ওই ওয়ার্ডের শ্রমিকনগরে একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকতেন স্বপরিবারে। কোনও রকমে মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা শেষ করেন শিপুলবাবু। তারপর সংসার টানার জন্য ১৯৯৫ সাল থেকে সেন মার্কেটে সবজি বিক্রির পেশা বেছে নিয়েছিলেন তিনি। তাঁদের নিজস্ব বাড়ি বর্তমানে নেই। শিপুলবাবু সহ স্ত্রী ও দুই সন্তান এবং তাঁর বাবা শিপুলবাবুর শ্বশুরবাড়িতে থাকেন। তাঁর ছেলে স্কুলে পড়ছে আর মেয়ে বারাসতের একটি কলেজে সাইকোলজি বিভাগের ছাত্রী।
শিপুলবাবু বলেন, ‘শ্রমিক নগর স্পোর্টিং ক্লাবের সদস্য হয়ে সামাজিক কাজ শুরু করেছিলাম। ১৯৯২ সালে রাজনৈতিক জীবন শুরু করি জাতীয় কংগ্রেসের হাত ধরে। ১৯৯৮ সালে মাননীয়া মখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূল কংগ্রেস দল গড়ার সঙ্গে সঙ্গে তৃণমূল দলে যোগদান করি। পরবর্তীকালে বুথ স্তর থেকে ওয়ার্ডের সভাপতি হই। ২০১৭ সালে প্রথমবার কাউন্সিলার পদে নির্বাচিত হই। সেই নির্বাচনে সিপিএম, বিজেপি, কংগ্রেস ও নির্দল প্রার্থীদের বিরুদ্ধে লড়াই করে ১ হাজার ৩০০ ভোটে জয়ী হই। প্রথম প্রথম কাউন্সিলর হিসেবে ৬ হাজার ৭০০ টাকা মাসিক ভাতা পেতাম। কয়েক বছর ধরে ৯ হাজার ৮০০ টাকা ভাতা পাই। কিন্তু, সেই টাকা দিয়ে কিছুই হয় না। তাই সবজি বিক্রি আর ছাড়তে পারিনি। ছেলে-মেয়ের পড়াশোনার খরচ চালানোর জন্যই সকালবেলায় সবজি বিক্রি করে রুটিরুজি জুটিয়ে তারপরে জনপ্রতিনিধি হয়ে মানুষের কাজ শুরু করি। সবজি বিক্রি আমার পেশা তাই এই পেশাকে আমি বড় করে দেখি। আগামীদিনেও সবজিই বিক্রি করে যাব।’