শববাহী যানের টাকা জোগাড় করতে না পারায় স্ত্রীর মৃতদেহ কাঁধে ১২ কিলোমিটার পথ হেঁটেছিলেন উড়িষ্যার কালাহান্ডির বাসিন্দা দানা মাজি। পাঁচ বছর আগে এমনই একটা ছবি নাড়িয়ে দিয়েছিল দেশবাসীকে। ২০১৭ সালের সেই ঘটনার বারবারই পুনরাবৃত্তি ঘটতে দেখা যাচ্ছে বিজেপি শাসিত মধ্যপ্রদেশে। এবার সে রাজ্যের মোরেনা শহরে এক স্থানীয় সাংবাদিকের ক্যামেরায় এমনই এক অসহায়তার ছবি ধরা পড়ল। তাঁর তোলা ছবিতে দেখা গিয়েছে, সাদা মলিন কাপড় দিয়ে মোড়া একটি ছোট্ট দেহ। যা কোলে নিয়ে রাস্তার উপর দেওয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে বসে রয়েছে বছর সাত-আটেকের এক শিশু। স্থানীয়দের প্রশ্নের উত্তরে ওই শিশু জানায়, তার নাম গুলশন। বয়স আট। আর তার কোলে যে দেহটি শায়িত রয়েছে, সেটি তার দু’বছরের ভাই রাজার। হাসপাতালের তরফে অ্যাম্বুল্যান্স না মেলায় তাঁর বাবা শববাহী যানের সন্ধানে গিয়েছে।
প্রসঙ্গত, দু’বছরের সন্তানের চিকিৎসা করাতে অম্বার বদফ্রা গ্রাম থেকে মোরেনা জেলা হাসপাতালে এসেছিলেন বাবা পুজরাম জাটভ। সঙ্গে এনেছিলেন বড় ছেলে গুলশনকেও। গ্রামের হাসপাতালে চিকিৎসা করানো যায়নি। তাই শহরের জেলা হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল ছোট ছেলেকে। তার পরেও বাঁচানো যায়নি তাকে। ছোট ছেলের মৃত্যুর পর তার দেহ নিয়ে গ্রামে ফিরে যাওয়ার উদ্যোগ করতে গিয়ে পুজরাম দেখেন, যে অ্যাম্বুল্যান্সটি তাদের নিয়ে এসেছিল, সেটি ফিরে গিয়েছে। প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে গ্রামে নিয়ে যাওয়ার জন্য জেলা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে একটি অ্যাম্বুল্যান্স চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেন, অ্যাম্বুল্যান্স নেই। ফলত, ছেলের দেহকে কাপড়ে মুড়ে হাতে নিয়েই হাসপাতাল ছাড়তে হয় পুজরামকে।
পুজরাম বলেন, ‘হাসপাতালের ঠিক বাইরে একটি অ্যাম্বুল্যান্স দাঁড়িয়ে ছিল। চালককে নিয়ে যেতে বলেছিলাম। কিন্তু ও দেড় হাজার টাকা চাইছিল। অত টাকা দেওয়া আমার পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়। তাই, রাস্তায় বেরিয়ে গাড়ি খুঁজছিলাম।’ রাস্তার এক পাশে গুনশনকে বসিয়ে তার কোলে ছোট ছেলের দেহ রেখে নিজে গাড়ি খুঁজতে বেরিয়েছিলেন পুজরাম। তার পরেই গোটা বিষয়টি স্থানীয়দের নজরে আসে। পুলিশ সূত্রে খবর, এক স্থানীয় থানায় খবর দেন। এর পরেই তৎপর হয়ে পুজরামদের গ্রামের ফেরানোর ব্যবস্থা করা হয়। স্বাভাবিকভাবেই এই ঘটনার কথা প্রকাশ্যে আসতেই অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছে মধ্যপ্রদেশ সরকারকে। বেআব্রু হয়ে পড়েছে তাদের বেহাল স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ছবি।