অগ্নিপথ প্রকল্পে চুক্তিভিত্তিক সেনা নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে মোদী সরকার। আর তা নিয়েই শোরগোল পড়ে গিয়েছে গোটা দেশ জুড়ে। মোদী সরকারের ‘চুক্তিভিত্তিক সেনা’ নিয়োগের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ক্রমশই বিক্ষোভ দানা বাঁধছে রাজ্যে রাজ্যে। এরই মধ্যে প্রতিরক্ষা মহল সূত্রে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে আসছে। সেনাবাহিনীর সঙ্গে যাঁরা যুক্ত, তাঁরা মনে করছেন, এই স্কিম সেনাতে বড় বিপদ তৈরি করে দেবে। মূলত তৈরি হবে কর্মসংস্থানগত সমস্যা। কারণ চার বছর পর এতগুলি তরুণ কী করবেন? কোথায় যাবেন? আসলে পেনশন তহবিলের আর্থিক বোঝা এড়াতে এই বিকল্প ফরমুলায় চক্রাকারে কয়েকজন কর্মচ্যুত তরুণ-তরুণী তৈরি হবে।
একইসঙ্গে হবে প্রশিক্ষণগত সমস্যাও। সেনাসূত্র বলছে, দু’বছরে সম্পূর্ণ প্রশিক্ষণ অসম্ভব। এটা জোড়াতালির কাজ হচ্ছে। একজন সেনা জওয়ানকে সঠিকভাবে তৈরি করতে যে সময় লাগে, যতদিনে তাকে আধুনিক অস্ত্র ধরার উপযোগী করা হয়, তা এই ক্ষেত্রে অসম্ভব। তাছাড়া যতটাই প্রশিক্ষণ হবে, সেই সরকারি খরচ শুধু চার বছরের জন্য? তারপর আবার নতুন একজনকে তৈরির খরচ? এটা বাস্তবসম্মত হতে পারে না। অন্যদিকে, পুরোদস্তুর সেনার চাকরিতে প্রশিক্ষণ থেকে কর্মজীবন, একটি নির্দিষ্ট মানসিকতা থাকে। ঝুঁকি নিয়েও লড়াই হয়। কিন্তু চার বছরের চুক্তিসেনায় ‘প্লে সেফ’ মানসিকতা কাজ করবে। নিরাপদে থেকে সময়টুকু কাটিয়ে দেওয়া। এটা সেনাবাহিনীর ভিত নড়িয়ে দেবে।
এদিকে, জওয়ানদের একে অপরের মধ্যে কোনও বন্ডিং থাকবে না। প্রসঙ্গত, সেনাতে প্রশিক্ষণ থেকে কর্মজীবন, পরস্পরের মধ্যে একটি বন্ডিং বা ভ্রাতৃত্ববোধের মানসিকতার বন্ধন গড়ে ওঠে। একে অপরের সঙ্গে কাজের বোঝাপড়া, আক্রমণের কৌশল, পরস্পরকে বাঁচাতে জান কবুল – এগুলো ‘অগ্নিপথ’-এর চার বছরের চুক্তিসেনায় ভাবাটাই হাস্যকর। আর পূর্ণ প্রশিক্ষণ হোক বা না হোক, সেনার বৃত্তে কিছু প্রশিক্ষণ তো হবেই। সেনার সঙ্গে থাকার মেজাজটাও আসবে। কিছু কৌশল রপ্ত হোক বা নাই হোক, জানা বা শোনা হবে। চারটি বছর পর যদি এরকম একঝাঁক প্রশিক্ষিত ও সেনাকৌশল কিছুটা জানা তরুণ কর্মচ্যুত হয়ে মানসিক অবসাদে ভোগে এবং ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে, তার পরিণাম কী হতে পারে, বিষয়টা যথেষ্ট উদ্বেগের।