বিনোদন জগতে নক্ষত্রপতন হল। বেশ কিছুদিন ধরেই কিডনিজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। এছাড়াও ৯২ বছরের পরিচালক ফুসফুসের সমস্যাও ছিল। ছিল ডায়াবেটিসও। চেস্ট মেডিসিনের চিকিৎসক সোমনাথ কুণ্ডু এবং মেডিসিনের চিকিৎসক সৌমিত্র ঘোষের নেতৃত্বে পাঁচজন চিকিৎসকের একটি দল সারাক্ষণ পরিচালককে নজরে রেখেছিলেন তাঁকে। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না। তাঁর মৃত্যুতে যেন সিনেমার এক অধ্যায়ের কাহিনি শেষ হল। যৌথ পরিবারের গুরুত্ব বুঝিয়েছিলেন তিনি। মধ্যবিত্ত বাঙালির টুকরো মুহূর্তগুলিকে সিনেমার পর্দায় তুলে ধরেছিলেন ‘বালিকা বধূ’, ‘দাদার কীর্তি’, ‘আলো’, ‘চাঁদের বাড়ি’র মতো সিনেমার মাধ্যমে। চলমান চিত্রের এই চিরকালীন সম্পদ রেখে চলে গেলেন কিংবদন্তি পরিচালক তরুণ মজুমদার। সোমবার এসএসকেএম হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। যে সময় সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেনের মতো পরিচালকরা সিনেমার জগতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। সেই সময় বড়পর্দায় পারিবারিক কাহিনি ফুটিয়ে তুলতে শুরু করেন তরুণ মজুমদার।
শচীন মুখোপাধ্যায় এবং দিলীপ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে মিলে ‘যাত্রিক’ নামে টিম তৈরি করে সিনেমা পরিচালনার কাজ শুরু করেন তিনি। তিন পরিচালকের প্রথম সিনেমা ‘চাওয়া পাওয়া’। অভিনয় করেছিলেন উত্তমকুমার, সুচিত্রা সেন, তুলসী চক্রবর্তী। ‘যাত্রিক’-এর পরিচালনাতেই তৈরি হয় ‘কাঁচের স্বর্গ’। জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিল ছবিটি। ‘পলাতক’ ছবির তৈরির পর ‘যাত্রিক’ থেকে বেরিয়ে আসেন তরুণ মজুমদার। ১৯৬৫ সালে ‘আলোর পিপাসা’ এবং ‘একটুকু ভালবাসা’ নামের দু’টি সিনেমা তৈরি করেন তিনি। তারপর থেকে নিজের পরিচালনায় তৈরি করেছেন ‘বালিকা বধূ’, ‘রাহগির’, ‘নিমন্ত্রণ’, ‘কুহেলি’, ‘শ্রীমান পৃথ্বীরাজ’, ‘গণদেবতা’, ‘দাদার কীর্তি’, ‘ভালবাসা ভালবাসা’, ‘আপন আমার আপন’, ‘আলো’, ‘চাঁদের বাড়ি’র মতো সিনেমা। সাহিত্যপ্রেমী ছিলেন তরুণ মজুমদার। তাই তাঁর সিনেমায় দেখা গিয়েছে বনফুল, বিমল কর, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো সাহিত্যিকের কাহিনি। শোনা গিয়েছে রবিঠাকুরের সুর। একাধিক জাতীয় পুরস্কার রয়েছে তরুণ মজুমদারে ঝুলিতে। পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত হয়েছেন কিংবদন্তি পরিচালক তরুণ মজুমদার।