বিভাজন আর ভারত-পাকিস্তানের সীমারেখায় আটকে নেই। জাতি হিসেবেই বিভক্ত করা হচ্ছে আমাদের। বৃহস্পতিবার দুপুরে তাঁর নিজের নামাঙ্কিত ‘অমর্ত্য সেন রিসার্চ সেন্টার’-এর উদ্বোধনী বক্তৃতা শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হিয়ে এমনই মন্তব্য করলেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন। গতকাল অন্নদাশঙ্কর রায়ের ছড়া আউড়ে তিনি বলেন, ‘তেলের শিশি ভাঙল বলে খুকুর পরে রাগ করো/ তোমরা যে সব ধেড়ে খোকা ভারত ভেঙে ভাগ করো!’ অন্নদাশঙ্করের ছড়ার এই ভাঙাভাঙি, ভাগাভাগি নিছক ভারত-পাকিস্তানের সীমারেখায় আটকে নেই। তাঁর কথায়, জাতি হিসেবেই বিভক্ত করা হচ্ছে আমাদের। এই সঙ্কটে দেশের বিচার বিভাগ একটি বিরাট অবলম্বন বলে তাঁর বিশ্বাসের কথাও বলেছেন অমর্ত্য। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি, ‘এত বড় বিপদে বিচার বিভাগ হয়তো কিছু করতে পারবে।’
অমর্ত্য তাঁর বক্তৃতায় বলেছেন, এ দেশে গণতন্ত্রের তিনটি স্তম্ভের মধ্যে ভারসাম্যের অভাব দেখা যাচ্ছে। আমলাদের আইনসভার সদস্যেরা নিয়ন্ত্রণ করছেন। যে কোনও মূল্যে ক্ষমতা দখলের জন্য তাঁরা ভোট-রাজনীতিতে মত্ত। এ সবই সমস্যার। এ প্রসঙ্গে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য থাকাকালীন নিজের অভিজ্ঞতার কথাও তুলেছেন অমর্ত্য। বলেছেন, ‘এক সময়ে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ে যুক্ত হয়েছিলাম। ২০১৪ সালের ভোটে পট পরিবর্তনের পরে পরিস্থিতি পাল্টে গেল। শিক্ষা ব্যবস্থা শুধু হিন্দুত্বের ধারা মেনে চলতে পারে না।’ স্কুল শিক্ষায় দেশের সুবিধাভোগী ও সুবিধা বঞ্চিতদের মধ্যে বিভেদ, বৈষম্য নিয়েও মুখ খুলেছেন অমর্ত্য। তাঁর কথায়, ‘স্কুল ব্যবস্থা ভেঙে পড়া বা ভাল স্কুল না-থাকা বিরাট সঙ্কট। তা গোটা দেশের জন্যই সম্ভাব্য বিপর্যয়। কিন্তু আমার সব থেকে বড় ভয় অন্য।’ অমর্ত্যর অভিযোগ, ‘গোটা দেশেই ভাঙনতন্ত্র চলছে। বিভাজনের হুমকিকে ভয়ের কারণ আছে। স্কুলপাঠ্য রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, কবীর, দাদূ বা তুলসীদাসের পথ থেকেও আমরা দূরে সরে আসছি।’
Amartya Sen