চিকিৎসাশাস্ত্রের অভূতপূর্ব উন্নতির কথা কারুরই অজানা নয়। কঠিন থেকে কঠিনতম রোগ সারিয়ে তুলছেন বাংলার চিকিৎসকরা। প্রাণ ফিরিয়ে দিচ্ছেন অসহায় রোগীর। তেমনই নতুন জিভ লাগিয়ে আরও একবার নজির গড়ল কলকাতার হাসপাতাল। জিভে কামড় পড়ে ক্ষত তৈরি হয়েছিল। বায়োপসি করতে গিয়ে সেই ক্ষত আরও বেড়ে যায়। ক্যানসার বাসা বাঁধে জিভে। ক্রমে কর্কটরোগ গলা বেয়ে শরীরের নিচের দিকে নামতে শুরু করে। প্রাণ বাঁচাতে অস্ত্রোপচার ছাড়া অন্য উপায় ছিল না। এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে অসাধ্য সাধন করল কলকাতার এনআরএস হাসপাতাল। শুধু জিভ রক্ষাই নয়, ক্ষতিগ্রস্থ অংশ বাদ দিয়ে নতুন জিভ লাগিয়ে দিল। নতুন জীবন পেলেন নদিয়ার গেদের যুবক আশিস বিশ্বাস। হ্যাঁ, এই শহরের সরকারি হাসপাতালেই এখন জিহ্বা প্রতিস্থাপন এবং পুনর্গঠন হচ্ছে। খরগপুরে নিরাপত্তারক্ষীর কাজ করতেন আশিসবাবু। কথা বলার ফাঁকে জিভে কামড় পড়েছিল। রক্তাক্ত হয়েছিল স্বাদেন্দ্রিয়। এই ধরনের ক্ষত সাধারণত নিজে থেকেই সেরে যায়। কিন্তু আশিসবাবুর ক্ষেত্রে তা হয়নি।
বরং বায়োপসি করাতে গিয়ে ক্ষত আরও বেড়ে যায়। এমনটাই দাবি তাঁর পরিবারের। পরবর্তীকালে ধরা পড়ে ক্যানসার। অত্যন্ত সচল অংশ বলে জিভের ক্যানসার খুব দ্রুত ছড়ায়। আশিসবাবুর ক্ষেত্রেও তাই হয়েছিল। চিকিৎসার জন্য একটা সময় ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে ভেলোরে যান ৫৩ বছরের আশিসবাবু। কিন্তু সুবিধা হয়নি। খরচ খরচা সামাল দিতে না পেরে আশিসবাবুকে নিয়ে তাঁর পরিবার ফিরে আসে কলকাতায়। এনআরএসের প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগে দেখান। বহির্বিভাগে দেখানোর পর ১৩ মে আশিসবাবুকে ভরতি করা হয় হাসপাতালে। এরপরই হতাশার চিত্রনাট্যে নাটকীয় মোড় আসে। সরকারি হাসপাতালের প্লাস্টিক সার্জনরা অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেন। সম্প্রতি অস্ত্রোপচার হয়। প্রায় ১০ ঘণ্টার ম্যারাথন অস্ত্রোপচারের পর শাপমুক্ত হন আশিস। তাঁর বা হাতের কব্জির উপরের শিরা, ধমনী নিয়ে পুনর্গঠন করা হয় জিহ্বা। সার্জন ডা. অমিতাভ দে জানিয়েছেন, সরকারি হাসপাতালে এই ধরনের জটিল অস্ত্রোপচার বিরল। নতুন নজির তৈরি হল।