গতবছরের বিধানসভা নির্বাচনের আগে বাংলায় ২০০ আসন জয়ের স্বপ্ন দেখলেও শেষমেশ ল্যাজেগোবরে অবস্থা হয়েছিল বিজেপি। তার পর থেকে ক্রমে ক্রমে দলের অবস্থা আরোই শোচনীয় হয়েছে। বাংলায় একের পর এক নির্বাচনে গোহারা হেরেছে পদ্মশিবির। তবুও যেন বোধোদয় হয়নি তাদের। একুশের নির্বাচনের পরেও তারা বারবার নিজেদের বাংলা ও বাঙালি বিরোধী প্রমাণ করে চলেছে। খোলাখুলিই বাংলা ভাগের দাবিকেও সমর্থন করছে তারা। যা ঘিরে রাজ্য-রাজনীতিতে শুরু হয়েছে তোলপাড়। এপ্রসঙ্গে তৃণমূলের মত, বিজেপির মানসিকতা ধরে ফেলেছে বাংলা ও বাঙালিরা। তাই ২০১৯-এ ভুল করে তাদের সমর্থন করার পর একুশে বেশিরভাগই বিজেপির উদ্দেশ্য চিনে সরে এসেছে তাদের পক্ষ থেকে। যে বিজেপি ২০০-র বেশি আসন জেতার জন্য ঘাম ঝরিয়েছে, তারাই মুখ থুবড়ে পড়েছে ৭৭-এ। তারপর রাজনৈতিক মহল ভেবেছিল, বিজেপি নিজেদের ভুল বুঝতে পারবে। কিন্তু সে গুড়ে বালি! নানান পদক্ষেপ ও দলীয় নেতাদের মতামত থেকেই বিজেপির বঙ্গবিরোধী মনোভাব জলের মতো পরিষ্কার। কাজেই ভোটের লড়াইয়েও বারবার ব্যর্থ তারা।
প্রসঙ্গত, কদিন আগেই কোচ কামতাপুর নিয়ে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন কেএলও সুপ্রিমো জীবন সিংহ। পৃথক রাজ্যের দাবিতে মমতাকে হুঁশিয়ারি দিতে গিয়ে তিনি তিন বিজেপি নেতার নাম করেন। দুই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জন বার্লা, নিশীথ প্রামাণিক ও সাংসদ জয়ন্ত রায়ের নাম করে তিনি বলেন, তাঁরা যথার্থ দাবি করেছিলেন। উল্লেখ্য, উত্তরবঙ্গকে পৃথক রাজ্যের দাবি করার আওয়াজ তুলেছিলেন তাঁরা। কেএলও সুপ্রিমো জীবন সিংহের দাবিকেও পক্ষান্তরে সমর্থন করেছিলেন বিজেপি সাংসদ জয়ন্ত রায়। পাশাপাশি তিনি বলেছিলেন, “উত্তরবঙ্গের মানুষকে শাসন করুন উত্তরবঙ্গের মানুষ। তাই বঙ্গভঙ্গের দাবি প্রাসঙ্গিক। উত্তরবঙ্গের মানুষ শোষিত, সব দিক দিয়ে বঞ্চিত। তাই আলাদা রাজ্যের দাবি উপেক্ষা করা যায় না। গোর্খাল্যান্ডের দাবিও অপ্রাসঙ্গিক নয়। দীর্ঘদিনের বঞ্চনা থেকে এই দাবি উঠে এসেছে।” তিনি এও বলেন, “জীবন সিংহের দাবিকে আমি সরাসরি সমর্থন জানাচ্ছে। তবে সেই নতুন রাজ্যের নাম যেন কামতাপুর না হয়। রাজ্যের নাম কামতাপুরের বদলে অন্য কিছু হলে আমার আপত্তি নেই।” অর্থাৎ কামতাপুরের পাশাপাশি উত্তরবঙ্গকে নিয়ে পৃথক রাজ্য ও গোর্খাল্যান্ডের বার্তায় বিজেপি নেতা বুঝিয়ে দিলেন কেএলও-র মতো জঙ্গী সংগঠনের সঙ্গে যোগাসাজশ আছে গেরুয়াশিবিরেরও।
স্বাভাবিকভাবেই জয়ন্ত রায়ের এমন দাবিতে বিজেপির উদ্দেশ্য আরোই প্রকট হয়ে গিয়েছে। বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্ব বাংলা ভাগের বিরোধী বলে দাবি করলেও, একের পর এক সাংসদ যেভাবে বঙ্গভঙ্গের সমর্থনে সুর চড়াচ্ছেন তাতে বিজেপি যে বাংলা-বিরোধী এবং বাঙালি-বিরোধী তা স্পষ্ট হয়ে উঠছে। যে জঙ্গী নেতা মুখ্যমন্ত্রীকে প্রাণে মারার হুমকি দিয়েছেন, তাঁর দাবিকে প্রকাশ্যে সমর্থন করছেন, তাতে বিজেপির ভূমিকা ও কাজ নিয়ে ভীষণ ক্ষুব্ধ সরার বাংলার মানুষজন। রাজনৈতিক মহলের একাংশ জানাচ্ছে , বিজেপি আদতে বাংলার উন্নয়নের জন্য লড়ছে না। বাংলাকে শেষ করে দেওয়াই তাদের লক্ষ্য। তাই বাংলাকে ভেঙে টুকরো টুকরো করে দেওয়ার জন্য নিরন্তর ষড়যন্ত্র করে চলেছে। বিজেপির এই ষড়যন্ত্রে শামিল হয়েছেন বেশ কিছু বাঙালি সাংসদ, বিধায়ক ও নেতা-মন্ত্রীরা। তাদের প্রচ্ছন্ন মদতেই বিচ্ছিন্নতাবাদী ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে জঙ্গীরা। যা বুঝতে পারছে মানুষ। এবং তার ফলেই বিজেপির পায়ের তলার মাটি ক্রমশ আলগা হচ্ছে। আগামী ভোটগুলিতেও তাদের দৈন্যদশা অটুট থাকবে বলেই পূর্বাভাস দিচ্ছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
bjp
read: বাড়ি-গাড়ির ঋণে এবার থেকে গুণতে হবে বাড়তি সুদ – রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সিদ্ধান্তে মাথায় হাত আমজনতার