গর্জে উঠলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর আগেও প্রশাসনিক সভায় বারবার সরব হতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কথায়, প্রশাসনিক কর্মী, তাঁদের কাজের খুঁটিনাটি বিচার-সমালোচনার মাধ্যমে আক্ষরিক অর্থে তিনি প্রশাসনিক প্রধানের পাশাপাশি বিরোধী দলের ভূমিকাও পালন করে থাকেন। বাংলার উচ্চপদস্থ কর্তা, বিশেষত মহিলা প্রশাসনিক আধিকারিকদের ক্ষমতা ও মর্যাদা যাতে ক্ষুণ্ণ না হয়, তা এদিনের প্রশাসনিক বৈঠক থেকে কার্যত সাফ জানিয়ে দিলেন তিনি। “জেলাশাসকদের বিরুদ্ধে কোনও কূটকাচালি শুনব না, সব ভেঙে দেব”, পুরুলিয়ার প্রশাসনিক বৈঠক থেকে জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষকে দাঁড় করিয়ে সরাসরি বললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিনের প্রশাসনিক বৈঠকের শুরুর কিছুটা পরেই জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষকে দাঁড় করান তিনি। আলোচনার শুরুটা হয় টেন্ডার নিয়ে। প্রশ্ন করেন, “জেলা পরিষদ কী কাজ করছে? জেলা পরিষদের সভাধিপতি? ১৫ শতাংশ টাকা তো আপনারা এখন পাচ্ছেন, কমিশন থেকে।”
এরপর, টাকা ঠিক কোন কোন খাতে ব্যবহার করা হয়েছে, তার বর্ণনা দেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশ্ন করেন, “পঞ্চায়েত সমিতির সাথে কো-অর্ডিনেশন রয়েছে?” ইতিবাচক উত্তর পেয়েছিলেন তিনি। এরপরও মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন করেন, “ডিএম-এর সঙ্গে সহযোগিতা করছেন?” এরপরই জেলা পরিষদের সভাধিপতিকে টেন্ডার নিয়ে প্রশ্ন করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “আপনাদের সব টেন্ডার কি পিডব্লুউডি নিয়ে চলে যায়?” ফের প্রশ্ন করেন মুখ্যমন্ত্রী। এরপর মুখ্যমন্ত্রী কিছুটা বিরক্ত হয়েই বলেন, “এইভাবে আমার নিজের লোককে দেওয়ার জন্য প্রজেক্টটা ছ’মাস ফেলে রাখলাম। তাতে আমার দলের বদনাম হল। আমার সরকারের বদনাম হল। আমি কি তার অনুমতি দেব?” মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যকে নস্যাৎ করার চেষ্টা করেছিলেন জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ। তিনি দাবি করছিলেন, নিয়ম মেনেই কাজ হচ্ছে। কিন্তু তখনই মুখ্যমন্ত্রী বললেন, “আমি যদি বলি, আমার কাছে সব খবর আছে।”
এরপর মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “ডিএম-এর কাছ থেকেও একটা রিপোর্ট চাই।” এরপরই জেলাশাসকদের প্রসঙ্গে চলে আসেন মুখ্যমন্ত্রী। সোজাসুজি তিনি বলেন, “কেউ কেউ যদি ভেবে থাক, আমি দুদিন অন্তর ডিএম-এসপি চেঞ্জ করব, সেটা কিন্তু আমি করছি না। এই ডিএম-এসপির সঙ্গেই কাজ করতে হবে। এসপি অনেক ভাল কাজ করেছেন। অনেকদিন সুন্দরবনে কাজ করেছেন, এখন এখানে এসেছেন।” মুখ্যমন্ত্রী জানান, “ডিএম-এর হাসব্যান্ডও ডিএম আছেন, এটা মাথায় রাখবেন। আমার ৮ জন মহিলা ডিএম আছেন। তাঁদের জন্য আমার গর্ব হয়। তাঁদের বিরুদ্ধে যদি কূটকাচালি কর, আমি কিন্তু একদম ভেঙে দেব সব।” জেলা পরিষদের সভাধিপতিকে তিনি নির্দেশ দেন, “ইউ লিড দ্য টিম। তোমাকে বলেছি টিম চালাতে, অন্য কেউ চালাবে না। তুমি শিবাজীর কথায় চলবে না। ডিএমকে কনফিডেন্সে নিয়ে সব কাজ করবে।” পাশাপাশি উল্লেখ্য, টেন্ডার নিয়ে যাবতীয় তথ্য খতিয়ে দেখে রিপোর্ট মলয় ঘটকের কাছে জমা দেওয়ার নির্দেশও দেন মমতা।