বিহার বিজেপির রাজ্য সভাপতি সঞ্জয় জয়সওয়াল বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছিলেন, ১ জুন জোটসঙ্গী তথা বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের ডাকা জাতি শুমারি নিয়ে সর্বদলীয় বৈঠক যোগ দেবে বিজেপি। জোট নিয়ে জেডিইউ-বিজেপি সমস্যার মধ্যে এই বৈঠক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। বিহারের জোট সরকারের বড় শরিক বিজেপির চাপের কাছে জেডিইউর নিজস্ব ‘ভিন্নমত’ চাপা পড়ে যাচ্ছে।
যদিও জাতি শুমারি নিয়ে বিহারের বিজেপি ও কেন্দ্রীয় বিজেপির নেতাদের মতামতের অমিল রয়েছে। কয়েকমাস আগেই বিহারের সিনিয়র বিজেপি নেতা এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই, সংসদরে দাঁড়িয়ে জানিয়েছিলেন বিহারে জাতি শুমারি করা সম্ভব হয়নি। যদিও বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার জাতি শুমারিকে ‘অবাস্তব’ বলেই মনে করছে। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বক্তব্য থেকেই সেই কথা স্পষ্ট। বিজেপির জাতীয় মুখপাত্র গুরু প্রকাশ পাসওয়না বলছিলেন, জাতি শুমারি থেকে সামাজিক ন্যায় বিচার সুনিশ্চিত হবে এমনটা বলা যায় না, কারণ বিজেপি ইতিমধ্যেই ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’-এর মাধ্যমে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। তিনি জানিয়েছিলেন, বিজেপি ওবিসিদের জন্য ন্যাশানাল প্যানেল তৈরি করেছে এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারে ২৭ জন ওবিসি মন্ত্রী রয়েছেন।
তবে বিহার বিজেপি এমন কোনও পদক্ষেপ নেবে না, যেটা থেকে কোনওভাবেই এটা মনে হতে পারে, গেরুয়া ব্রিগেড জাতি শুমারি প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে। সেই কারণেই প্রথম থেকেই এই প্রস্তাবকে সমর্থন জানিয়ে এসেছে বিজেপি। কিছু বছর আগেই মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার বিহার বিধানসভার দুটি কক্ষে এই প্রস্তাব এনে সর্বসম্মতিক্রমে এই প্রস্তাব পাশ করেছিলেন। এমনকী গত বছর বিহারের রাজনৈতিক দলগুলির একটি প্রতিনিধি দল যখন জাতি শুমারি নিয়ে দাবি দাওয়া জানাতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিল, সেই প্রতিনিধি দলেও বিজেপি ছিল।
জাতি শুমারি ইস্যুতে বিহার রাজ্য বিজেপি বরাবরই কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের উল্টো পথেই হেঁটেছে। বিহারের প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী সুশীল মোদী মাঝেমাঝেই জাতি শুমারির সমর্থনে জোরাল সওয়াল করেছেন। অন্যদিকে বিহারের বিরোধী দলনেতা তেজস্বী যাদবও জাতি শুমারির দাবিতে একাধিকবার প্রশ্ন তুলেছেন। কোনও এক জায়গায় দাঁড়িয়ে বিজেপির সঙ্গে জোটে থাকলেও জাতি শুমারি ইস্যুকে কেন্দ্র করে কেন্দ্রীয় বিজেপি ও নীতীশের সুর ভিন্ন হলেও তেজস্বীর সঙ্গে সুর মিলে গিয়েছে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের ওপর চাপ তৈরির চেষ্টা করলেও শীর্ষনেতৃত্বের সিদ্ধান্ত মানতে তাঁরা বাধ্য। সেই কারণে বিহারের জোট সরকারে নীতীশ-বিজেপি চাপানউতোর আগামী দিনে কোন দিকে যায়, সেটাই এখন দেখার।