কাজী নজরুল ইসলাম হলেন মনুষ্যত্বের কবি। যখন দেশে দেশে সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গিবাদ, ধর্মীয় কুসংস্কার বাড়ছে তখন তার বিপরীতে, অসাম্প্রদায়িক ও মানবতার কবি নজরুল চর্চার বিকল্প নেই। সাম্যের কবি, বিরহ-বেদনার কবি, বিদ্রোহের কবি, বাংলাদেশের সেই জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের আজ ১২৩তম জন্মবার্ষিকী। সেদিন সামনে এল এক অসাধারণ খবর। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে মহান ব্যক্তিদের আবক্ষ মূর্তি বসে। প্রথম প্রথম সেই মূর্তির দেখভাল করেন অনেকে।
তার পর অবহেলিতভাবে পড়ে থাকে সেই সমস্ত মূর্তি। কালনায় দেখা গেল একেবারে তার উলটো ছবি। গত ৫ বছর ধরে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের আবক্ষ মূর্তির দেখভাল করে চলেছেন এক শিক্ষক। নিয়মমাফিক সাবান, শ্যাম্পু দিয়ে নিজের হাতে ধুয়েমুছে সাফ করেন সেই মূর্তি। যা এককথায় নজিরবিহীন। কবি নজরুলের জন্মবার্ষিকী হোক কিংবা মৃত্যুদিন, বিশেষ দিনগুলিতে একসময়ে তাঁর কবিতা পাঠের মধ্য দিয়েই জেগে উঠত পূর্ব বর্ধমানের শহর কালনা।
কচিকাঁচাদের সঙ্গে নিয়ে শহরের রাস্তায় পাঠ করতেন কবি নজরুলের কবিতা। নিয়মিত না হলেও এখনও কবিতা পাঠ করেন ৬৭ বছর বয়সি অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক দীপঙ্কর সাহা। শুধু বিদ্রোহী কবির কবিতা পাঠই নয়, কবির আবক্ষ মূর্তিকে সযত্নে পরিষ্কার করে দেবতা জ্ঞানে পুজো করে চলেছেন তিনি। আজ অর্থাৎ মঙ্গলবার কবির ১২৩ তম জন্মবার্ষিকী। জন্মদিনের প্রাক্কালে সোমবার সকাল থেকেই মূর্তিকে পরিষ্কার করেন তিনি।
ধূপ-ধুনো দিয়ে কার্যত পুজো সেরেছেন তিনি। এই প্রসঙ্গে দীপঙ্কর সাহা বলেন, “কবি নজরুলের কবিতা, সংগীত, দেশপ্রেমের অনুপ্রেরণা জোগায়। আমার মা শান্তি সাহা ও মাসিদের নজরুল প্রেম, কবিতা পাঠ, নজরুল গীতি শুনে মোহিত হয়ে পড়তাম। আর এতেই মনের খিদে মিটে যেত। সেই ভালবাসা ও শ্রদ্ধা জানাতেই তাঁর মূর্তি পরিষ্কারের কাজ নিজের ইচ্ছাতেই করি।” কালনা শহরের ১১ নম্বর ওয়ার্ডের কাঁসারি পাড়ার বাসিন্দা দীপঙ্কর সাহা। সাত বছর আগে হাই স্কুলের শিক্ষকতা থেকে অবসর নিয়েছেন তিনি।