বাংলার মানুষের কাছে বরাবরই প্রিয় হয়ে উঠেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নানান জনমুখী প্রকল্পগুলি। বাংলার মানুষের উন্নয়নের স্বার্থে যে-সকল আর্থসামাজিক প্রকল্প চালু করেছে রাজ্য সরকার, তার মধ্যে অন্যতম হল ‘কন্যাশ্রী’। উল্লেখ্য, এই প্রকল্প যে শুধু রাজ্যে চূড়ান্ত জনপ্রিয়তা পেয়েছে তাই নয়, পেয়েছে রাষ্ট্রসংঘ থেকে পুরস্কারও। একই সঙ্গে রাজ্যে বাল্যবিবাহ রোধেও সাফল্যের মুখ দেখেছে এই প্রকল্প। সেই প্রকল্পের সুবিধা বাংলার সরকারি বা সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলের সব ছাত্রীরা পাচ্ছে কিনা, এবার তা সুনিশ্চিত করতে বড়সড় পদক্ষেপ করতে চলেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। আর সেই সুনিশ্চয়তার ক্ষেত্রে সাহায্যে নেওয়া হবে ‘বাংলার শিক্ষা’ পোর্টালের। সূত্র অনুযায়ী জানা গিয়েছে এমনটাই।
প্রসঙ্গত, ‘কন্যাশ্রী’ প্রকল্পের সুবিধা থেকে রাজ্যের সরকারি বা সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলের কোনও যোগ্য ছাত্রী যাতে আর বঞ্চিত না থাকে, সেটাই সুনিশ্চিত করতে চাইছে রাজ্য। ২০১২ সাল থেকে চালু হওয়া এই প্রকল্পে সরকারি বা সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলের ১৩ থেকে ১৮ বছরের ছাত্রীরা আবেদন করতে পারে। এখনও পর্যন্ত মোট সাড়ে ৭৭ লক্ষের বেশি ছাত্রী কন্যাশ্রী প্রকল্পের সুবিধা পেয়েছে। নতুন উপভোক্তারা এবারও এই প্রকল্পে যুক্ত হবে। তবে অন্যান্য বছর কতজন ছাত্রী নতুন করে এই প্রকল্পের আওতায় আসবে তার হিসেব কষে সংশ্লিষ্ট দফতর। সেই লক্ষ্যমাত্রা নবান্নকে জানানো হয়। তবে এবার কোনও টার্গেট ধরে এগোনো হচ্ছে না। কারণ শিক্ষাদফতরের পোর্টাল ‘বাংলার শিক্ষা’ অনুযায়ী, অষ্টম শ্রেণির প্রতিটি ছাত্রীকেই কন্যাশ্রীতে নেওয়া হবে। তবে আবেদনের পরেও কোনও ছাত্রী এই প্রকল্পের সুবিধা থেকে বাদ পড়ল কি না, তা যাচাই করার কোনও পদ্ধতি এতদিন ছিল না। এজন্য মূলত নির্ভর করতে হত জেলা আধিকারিকদেরই ওপর। সমস্ত রকম চেষ্টা সত্ত্বেও দেখা যেত, কিছু ছাত্রী রয়ে যাচ্ছে এই প্রকল্পের বাইরে। এবার তারই সমাধানে নামল রাজ্য সরকার।
পরিকাঠামোতেও বদল লক্ষ্যণীয়। ‘বাংলার শিক্ষা’ পোর্টালে এতদিন কোন স্কুলে মোট কতজন ছাত্রছাত্রী রয়েছে তার পরিসংখ্যান থাকত। নতুন পরিকাঠামোয় প্রত্যেক স্কুলের প্রতিটি ছাত্র-ছাত্রীর নাম এই পোর্টালে লেখা থাকছে। এবার থেকে নারী ও শিশু উন্নয়ন এবং সমাজ কল্যাণ দফতর শিক্ষাদফতরের এই তথ্য ব্যবহার করবে। তার ফলে কন্যাশ্রী প্রকল্পের সুবিধা পাওয়ার যোগ্য প্রতিটি ছাত্রীকে সহজেই চিহ্নিত করতে পারবেন সংশ্লিষ্ট আধিকারিকরা। ‘বাংলার শিক্ষা’ পোর্টাল থেকে একটি স্কুলের ছাত্রীদের তালিকা মিলিয়ে দেখলে বুঝতে পারা যাবে ঠিক কতজন কন্যাশ্রী প্রকল্পের সুবিধা পাওয়ার উপযুক্ত। সেই অনুযায়ী যদি আবেদন পত্র না আসে, তখন খোঁজ নেওয়া হবে আবেদনপত্র কারা, এবং কী কারণে জমা করতে পারেনি। তাদের নাম পাঠিয়ে আবেদনপত্র জমার জন্য প্রয়োজনীয় সাহায্য করার নির্দেশ দেওয়া হবে জেলা এবং স্কুলের আধিকারিকদের। স্বাভাবিকভাবেই এহেন সিদ্ধান্তের পর খুশি ছাত্রীরা। দ্রুত সুরাহা মিলবে বলেই আশা তাদের।