বারবার নানান ছল-বল-কৌশল প্রয়োগ করেও বাংলায় নিজেদের আধিপত্য প্রসারে ব্যর্থ হয়েছে বিজেপি। বিগত একুশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে যেনতেন প্রকারেণ বাংলা ও বাঙালির হৃদয় ছুঁতে চেয়েছিল পদ্মশিবির। মোদী সরকার বেছে নিয়েছিল নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুকে। সেই সময় বিস্তর প্রতিশ্রুতি দিয়ে নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুকে সম্মান দেখানোর একাধিক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল বিজেপি সরকারের তরফে। কিন্তু বাংলায় ভোটে ভরাডুবির পর সুভাষচন্দ্র বসু বিজেপি প্রশাসনের ভাষায় ‘জাঙ্ক’ বা আবর্জনার বিষয়! নেতাজি সংক্রান্ত কোনও বিষয়ে প্রশ্নের উত্তরই দিচ্ছে না মোদী সরকার। যা নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্কে ঝড়। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি কেন্দ্রের এক আমলার থেকে এমনই জবাব পেয়েছেন নেতাজীর পরিবারের এক সদস্য। যথারীতি চরম অসন্তুষ্ট সুভাষচন্দ্রের প্রপৌত্রী রাজ্যশ্রী চৌধুরী। এ ব্যাপারে তিনি হেস্তনেস্ত চান। প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, সাতদিনের মধ্যে ওই আধিকারিককে সাসপেন্ড ও গ্রেফতার করতে হবে। অন্যথায় এই বিষয়ে তিনি আইনের দ্বারস্থ হবে তিনি।
উল্লেখ্য, আইএনএ-র প্রধান হিসেবে ১৯৪৩ সালে সিঙ্গাপুরে প্রতিষ্ঠিত আজাদ হিন্দ সরকার তথা অখণ্ড ভারতের প্রথম সরকারের প্রথম রাষ্ট্রপ্রধান পদে নিজেকে ঘোষণা করেছিলেন সুভাষচন্দ্র। সেই সময় তাঁকে কুর্নিশ জানিয়ে স্বীকৃতি দিয়েছিল বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলি। সুভাষের নেতৃত্বাধীন সেই সরকারকে কূটনৈতিক স্বীকৃতিও দিয়েছিল একাধিক দেশ। ২০১৮ সালে আইএনএ-র ৭৫তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে একাধিক অনুষ্ঠান আয়োজন করে মোদী সরকার। ওই বছর ২১শে অক্টোবর আইএনএ দিবসে লালকেল্লায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে নেতাজিকে অখণ্ড ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে স্বীকৃতি দেন মোদী। এখন রাজ্যশ্রীদেবী চান, দিল্লীর ঐতিহাসিক তিনমূর্তিভবন প্রাঙ্গণে ২৭১ কোটি টাকা ব্যয়ে গড়ে ওঠা প্রধানমন্ত্রী সংগ্রহালয়ে স্থান পান নেতাজী। সুভাষচন্দ্রের নানা ধরনের ছবি, ভিডিও ও অডিও ক্লিপিংসের পাশাপাশি দেশনায়কের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস স্থান পাক সেখানে। এই মর্মে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় সেই চিঠির জবাব দেওয়ার জন্য সংগ্রহালয়ের দায়িত্বে থাকা নেহরু মেমোরিয়াল মিউজিয়াম অ্যান্ড লাইব্রেরি কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছে।
ক’দিন আগে সংস্কৃতি মন্ত্রকের ডেপুটি ডিরেক্টর রবি কে মিশ্র রাজ্যশ্রীদেবীর প্রশ্নের জবাবে নেতাজী সংক্রান্ত এই বিষয়কে ‘জাঙ্ক’ বলে ব্যাখ্যা করেন। পাশাপাশি এই ধরনের ‘জাঙ্ক’ বিষয়ে জবাব দেওয়া প্রয়োজন নয় বলেও জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় রবি মিশ্রর এই জবাবকে উপযুক্ত বলে মনে করে রাজ্যশ্রীদেবীকে জানিয়ে দেয়। মোদী সরকারের এহেন আচরণে বসু পরিবারের অনেক সদস্যি রীতিমত ক্ষুব্ধ। সাধারণ মানুষের মধ্যেও এই ঘটনায় বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। গত সোমবার ১৬ই মে প্রধানমন্ত্রীকে এব্যাপারে কড়া চিঠি লেখেন রাজ্যশ্রীদেবী। ওই আধিকারিকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিও তুলেছেন তিনি। এর অন্যথায় মামলা করার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন রাজ্যশ্রীদেবী। কার্যত দেশনায়ক সুভাষচন্দ্রকে অপমান করছে বিজেপি। বিজেপির আচরণে স্পষ্ট, আদপে দেশনায়ককে সম্মান জানানো নয়, ভোটের জন্যই বাঙালির নেতাজী আবেগকে ব্যবহার করেছে বিজেপি। এরপর ভোট মিটতেই ফের তথৈবচ পরিস্থিতি। নেতাজী ইস্যু ফের চলে গিয়েছে অবহেলার খাতায়।