ত্রিপুরায় অব্যাহত গেরুয়াশিবিরের টালমাটাল দশা। বেগতিক বুঝে ক’দিন আগেই বিপ্লব দেবকে মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছে বিজেপি। তাতেও কাটছে না চিন্তা। প্রসঙ্গত, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব শুধু মাত্র আরএসএসের নোই, বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বেরও কাছের লোক বলে পরিচিত ছিলেন। হঠাৎই তাঁকে অপসারণ করেছে দিল্লীর বিজেপির সর্বভারতীয় নেতৃত্ব। তারপর লজ্জা ঢাকতে বিপ্লব এখন গেরুয়াশিবিরের সর্বভারতীয় নেতৃত্বের শেখানো বুলি আউড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ। জনসমক্ষে তিনি বলছেন যে, দায়িত্বশীল কর্মীদের দল সংগঠনে আনতে চেষ্টা চালাচ্ছে রাজ্য বিজেপি। সংগঠন ঠিক থাকলে সরকার টিকবে। তাঁর মতে লোকেদের দলের জন্য কাজ করা উচিত। তাতেই নাকি বিজেপির উপকার হবে। তাহলে মানিক সাহার মতো নেতারা যাঁরা এতদিন রাজ্যের গেরুয়া শিবিরের দায়িত্বে ছিলেন, তারা কি ঠিক করে তাদের সেই দায়িত্ব সামলাননি? স্বাভাবিকভাবেই, প্রশ্ন উঠছে রাজনৈতিক মহলে।
উল্লেখ্য, বিপ্লব দেবের সঙ্গে মতবিরোধের জেরে দলের প্রাক্তন নেতা সুদীপ রায়বর্মণ বিজেপি ছেড়েছেন। অভিযোগ উঠেছে, বিপ্লব দেবের সম্পর্ক ভালো ছিল না দলের উপজাতি নেতাদের সঙ্গে। আগামী বছর ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচন, তার আগে এইসব বিষয় ভাবছে গেরুয়াশিবিরকে। ১৯টি জেলায় উপজাতি ভোটে নির্ধারণ করবে ত্রিপুরার ফলাফল। এদিকে, ধীরে ধীরে শক্তিশালী হচ্ছে ত্রিপ্রা মোথা পার্টি যা কিনা ত্রিপুরার রাজবাড়ির মাথা প্রদ্যোৎকিশোর মানিক দেববর্মার দল। এরই সঙ্গে রয়েছে ১৪টি উপজাতি সংগঠন। ত্রিপ্রা মোথা ঘোষণা করে দিয়েছে তারা আগামী বছর ৩৫টি আসনে প্রার্থী দেবে, যার মধ্যে ২০টি তপশিলি উপজাতিদের জন্য সংরক্ষিত এবং বাকিটা ১৫টি সাধারণ আসন। এই পরিস্থিতিতে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে বিপ্লবের অপসারণ ছাড়া উপায় ছিল না। মানিক সাহার নেতৃত্বে বর্তমানে ত্রিপুরা মন্ত্রিসভায় রয়েছেন পাঁচ জন উপজাতীয় মন্ত্রী। এদের মধ্যে উপমুখ্যমন্ত্রী জিষ্ণু দেববর্মা আবার ত্রিপুরার রাজবাড়ির সদস্য। এছাড়াও আছেন রামপদ জামাতিয়া, প্রেমকুমার রিয়াং, এনসি দেববর্মা ও সান্ত্বনা চাকমা। এবিষয়ে দলের অনেকে মনে করেছিলেন, বিপ্লবের অপসারণের পর কোনও উপজাতিকেই হয়তো মুখ্যমন্ত্রী পদে বসানো হবে। অনেকে জিষ্ণু দেববর্মার কথা ভেবেছিলেন। কারণ, জিষ্ণু দেববর্মা বিজেপির শরিক ইন্ডিজেনাস পিপলস ফ্রন্ট অফ ত্রিপুরা (আইপিএফটি)-র প্রধান। বিপ্লব দেবের জমানায় বিজেপির সঙ্গে আইপএফটির মতপার্থক্য বাড়ছিল। ফলত, তাতে বিজেপির হাত থেকে ক্ষমতা বেরিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল। যা দুশ্চিন্তা হয়ে দাঁড়িয়েছিল গেরুয়াশিবিরে।