এ আর নতুন কিছু নয়। মোদী সরকারের আমলে বারবারই মুখ থুবড়ে পড়েছে দেশের অর্থনীতি। অর্থনৈতিক ব্যর্থতায় নরেন্দ্র মোদী পূর্বতন সরকারগুলির নজির ভেঙে দিয়েছেন। পাশাপাশি নিজের আমলের লজ্জার রেকর্ডও ছাপিয়ে যাচ্ছেন। ১৭ বছরের মধ্যে সর্বাধিক উচ্চতায় পৌঁছেছে পাইকারি মূল্যবৃদ্ধির হার। মঙ্গলবার প্রকাশিত কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান অনুযায়ী তা দাঁড়িয়েছে ১৫.০৮ শতাংশে। ব্যর্থতার রেকর্ড এখানেই শেষ নয়। এদিন আবার ডলারের নিরিখে টাকার বিনিময়মূল্য পৌঁছেছে সর্বনিম্ন স্থানে। এক ডলার ৭৭ টাকা ৮০ পয়সায় পৌঁছে যায়, যা সর্বকালীন রেকর্ড। প্রায় প্রতিদিনই এমন নজির গড়ছে ভারত। ফলে আগামী দিনে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির আশঙ্কা চরমে উঠেছে।
উল্লেখ্য, সরকারি তথ্যেই স্বীকার করা হয়েছে, পেট্রোপণ্য তো বটেই, সব্জি, ফল, খাদ্যপণ্যের ঊর্ধ্বমুখী দামের জেরে এই বিপুল মূল্যবৃদ্ধি। শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রকের হিসেবে পাইকারি মুদ্রাস্ফীতির হার যেখানে পৌঁছেছে, এই সীমায় শেষবার তা গিয়েছিল ২০০৫ সালের এপ্রিল মাসে। অর্থাৎ ইউপিএ সরকারের প্রথম বছর। তারপর থেকেই মূল্যবৃদ্ধির হার কমতে শুরু করে। সেদিক থেকে আরও বড় রেকর্ড করেছে মোদী সরকার। কারণ, ২০২১ সালের এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের এপ্রিল—টানা এক বছরের বেশি সময় পাইকারি মূল্যবৃদ্ধির হার দাঁড়িয়ে দুইয়ের অঙ্কে। ১৯৫৩ সালের পর এই নিয়ে মাত্র ছ’বার এমনটা হয়েছে। অতীতে কখনও খাদ্যসংকট, কখনও যুদ্ধ, আবার কখনও জিডিপি বিপর্যয়ের কারণে এক বছর ধরে পাইকারি মুদ্রাস্ফীতির হার ডবল ৯-এর উপর থেকেছে। কিন্তু ১৯৯৫ সালের পর আর একবারও এই পরিস্থিতি হয়নি। অর্থাৎ কংগ্রেস, যুক্তফ্রন্ট, প্রথম এনডিএ এবং ইউপিএ—সব সরকারকে ছাপিয়ে গিয়েছে মোদী জমানার আর্থিক ভারসাম্যের অকর্মণ্যতা।
তবে দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা হচ্ছে বলে দফায় দফায় দাবি করেছে কেন্দ্র। অথচ টানা ১৩ মাস ধরে পাইকারি মূল্যবৃদ্ধি কমাতে পারছে না রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এবং মোদী সরকার। অতীতের সব সরকারকে নিজের আট বছরের তুলনায় ব্যর্থ বলতেই পছন্দ করেন নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, অর্থনীতি সামলাতে মোদী সরকার শুধু যে দিশাহারা তা-ই নয়, সম্পূর্ণ অসফল। কারণ, মূল্যবৃদ্ধি রোধ করতে না পারার প্রবণতাই আর্থিক সঙ্কটের একমাত্র উদাহরণ নয়। টাকার মূল্য নিয়েও ফের মোদী সরকার নিজের রেকর্ড নিজেই ভেঙেছে। মঙ্গলবার বাজার খুলতেই আসে বড়সড় ধাক্কা। ডলারের দর পৌঁছে যায় ৭৭টাকা ৭৪ পয়সায়। দিনের শেষে তা দাঁড়ায় ৭৭ টাকা ৮০ পয়সায়। এর আগে টাকার দাম সর্বনিম্ন রেকর্ড গড়েছিল গত ১২ই মে। সেদিন ডলারের দাম হয়েছিল ৭৭ টাকা ৬৩ পয়সা। এই নিম্নমুখী প্রবণতা সামলাতে চূড়ান্ত ব্যর্থ মোদী সরকার।
পাশাপাশি, বাণিজ্য মন্ত্রকের প্রকাশিত পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, খাদ্যদ্রব্য কিংবা পেট্রোল-ডিজেল নয়, প্রায় প্রতিটি সেক্টরের পণ্যের দাম মার্চ মাসের তুলনায় দুই থেকে আড়াই শতাংশ হারে বেড়ে গিয়েছে। সবথেকে উদ্বেগজনক অবশ্যই খাদ্যপণ্য সূচক—প্রায় সাড়ে ৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। বলাই বাহুল্য পাইকারি মূল্যবৃদ্ধির এই আকাশছোঁয়া প্রবণতার জেরে আগামী দিনে নিত্যপণ্যের দাম আরও বাড়বে। পাশাপাশি আরও বড় উদ্বেগ অপেক্ষা করে রয়েছে জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে। আগামী ৬ই জুন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নীতি নির্ধারণ কমিটির বৈঠক। এমতাবস্থায় আশঙ্কা, এই মূল্যবৃদ্ধির পরিসংখ্যানের প্রেক্ষিতে ফের অন্তত ৩৫ থেকে ৪০ বেসিস পয়েন্ট বাড়বে রেপো রেট। অর্থাৎ বাড়ি-গাড়ির ঋণে আবার বাড়তে চলেছে ইএমআই।