স্বাধীন মত প্রকাশের খেসারত দিতে হল মণিপুরের সাংবাদিক কিশোরচন্দ্র ওয়াংথেমকে। একটি ফেসবুক পোস্টে মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংকে ‘মোদী ও হিন্দুত্বের পুতুল’ বলায় কটাক্ষ করায় কুখ্যাত জাতীয় নিরাপত্তা আইনে প্রথমে কিশোরকে গ্রেফতার এবং পরে এক বছরের কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছে মণিপুর আদালত।
ঘটনার সূত্রপাত চলতি বছরের ১৯ নভেম্বর মণিপুর সরকারের উদ্যোগে আয়োজিত ঝাঁসির রাণী লক্ষ্মীবাইয়ের জন্মবার্ষিকী পালনের অনুষ্ঠান ঘিরে। সেই অনুষ্ঠানটিকে নিয়ে ফেসবুকে একটি ভিডিয়ো পোস্ট করেন কিশোরচন্দ্র ওয়াংখেম। তাঁর বক্তব্য ছিল, ‘এই রাজপুত যোদ্ধার সঙ্গে মণিপুরের কোনও যোগাযোগ নেই। অথচ মণিপুরের স্বাধীনতা যোদ্ধাদের ভুলে মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংহ আরএসএস-বিজেপির মতাদর্শ অনুসরণ করে ঝাঁসির রানির জন্মবার্ষিকী পালনে উদ্যোগী হয়েছেন।’ এই জন্য তিনি মুখ্যমন্ত্রীকে ‘প্রধানমন্ত্রীর পুতুল’ বলেও উপহাস করেছিলেন ওই ভিডিয়োতে। এছাড়া তাঁকে গ্রেফতার করার চ্যালেঞ্জও ছুড়েছিলেন কিশোরচন্দ্র।
এরপরেই ২১ নভেম্বর পুলিশ গ্রেফতার করে কিশোরচন্দ্রকে। তাঁর বিরুদ্ধে রাজদ্রোহের অভিযোগ আনা হয়। ২৫ নভেম্বর ইম্ফল পশ্চিম জেলার মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট রাজদ্রোহের অভিযোগ খারিজ করে ওয়াংখেমকে জামিনের নির্দেশ দেন। আশ্চর্যের ব্যাপার হল, আদালতের এই রায়ের পরেও সংশ্লিষ্ট ডিস্ট্রিক্ট কমিশনার নাওরেম পরভিন সিং আরেকটি আদেশ জারি করে বলেন, ওয়াংখেম জামিনে মুক্ত থাকলে রাজ্যের নিরাপত্তা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষার বিরুদ্ধে ফের সক্রিয় হবেন। কারণ তিনি একজন অভ্যস্ত অপরাধী। এর পরেই ওয়াংখেমকে জাতীয় নিরাপত্তা আইনে আটক করা হয়। এর প্রায় এক মাস পরে জাতীয় নিরাপত্তা আইনের ধারায় তঁাকে ১২ মাসের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়। এর আগে ফেসবুক পোস্টে বিজেপি–কে বুধু জোকার পার্টি বলে মন্তব্য করেও গ্রেপ্তার হন ওয়াংখেম।
কিশোরচন্দ্রের গ্রেপ্তারির নিন্দা করেছে ইন্ডিয়ান জার্নালিস্ট ইউনিয়ন ও প্রেস কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া। পথে নেমে প্রতিবাদ করেছে দেশের সাংবাদিক মহলের একাংশ। যদিও মুখে কুলুপ এঁটেছে অল মণিপুর ওয়ার্কিং জার্নালিস্টস ইউনিয়ন। তাদের বক্তব্য, ফেসবুক পোস্টকে ‘সংবাদ’ মানতে আপত্তি আছে তাদের। কিন্তু তাদের নীরব থাকার পিছনে রাজনৈতিক চাপ আছে বলে মনে করছেন অনেকেই।
প্রসঙ্গত, ৩৯ বছরের কিশোরচন্দ্র কাজ করতেন আইএসটিভি নামের একটি সংবাদমাধ্যমে। সেখানে কাজ ছাড়ার পরই মোদী-আরএসএস-বিজেপি বিরোধী পোস্ট করেছিলেন ফেসবুকে। যার দায়ে জেলে যেতে হল তাঁকে।