নোটবন্দী, জেএসটি ও এনআরসির মতো ইস্যুগুলি নিয়ে প্রথম থেকেই আক্রমণ শানিয়ে যাচ্ছে বিরোধীরা। একইসঙ্গে ছিল শরিক দলগুলির চাপ। তবে শুধু বিরোধী কিংবা জোট শরিকই নয়, গোবলয়ে গোহারা হারের পর এবার আগুন লেগেছে ঘরেই। ৫ রাজ্যেই বিজেপি মুখ থুবড়ে পড়ার পর এখন প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে দলের অন্দরেই। যে চিত্রটি খুব বেশি দেখা যায়নি এতদিন। গতকাল বিজেপির সংসদীয় দলের বৈঠকে কয়েকজন সাংসদ সরাসরিই জানতে চাইলেন রামমন্দির নিয়ে সরকার আর দল কী ভাবছে? রামমন্দির কবে নির্মাণ করা হবে?
মঙ্গলবার সংসদ ভবনের অ্যানেক্সি বিল্ডিং-এ আয়োজিত সংসদীয় দলের বৈঠকে মধ্যেই আচমকা এমন প্রশ্ন তোলেন উত্তরপ্রদেশের দুই বিজেপি সাংসদ রবীন্দ্র কুশওয়া এবং হরি নারায়ণ রাজভড়। দু’জনের এই প্রশ্ন যে একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, তার প্রমাণ পাওয়া যায় একটু পরেই। কারণ তাঁরা যখন বলেন, রামমন্দিরের জন্য মানুষ উদগ্রীব হয়ে অপেক্ষা করছে, তখন অন্য বিজেপি সাংসদরাও তাঁদের সমর্থন করেন। এবং রামমন্দিরের সঙ্গে আবেগ জড়িত থাকার কথা বলেন সকলেই।
গতকালের দলীয় বৈঠকে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবেই হাজির ছিলেন না প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং দলের সভাপতি অমিত শাহ। ফলে তাঁদের অনুপস্থিতিতে বৈঠকের সভাপতিত্ব করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং। তিনি স্পষ্টই বোঝেন যে রামমন্দির নিয়ে দলের অভ্যন্তরে একটি চাপ সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে উত্তরপ্রদেশের দুই সাংসদ যখন একজোট হয়েই এমন প্রশ্ন তুলেছেন এবং দাবি করেছেন সরকারের দ্রুত সিদ্ধান্তের তখন বোঝাই যাচ্ছে এই নিয়ে আগামীদিনে দলের অন্দরেই চাপ আরও বাড়বে।
সেই গুরুত্ব অনুধাবন করে এবং একপ্রকার বাধ্য হয়েই রাজনাথ সমস্বরে রামমন্দিরের দাবিকে সমর্থন করেন। তিনি বলেন, সকলেই চায় রামমন্দির যত দ্রত সম্ভব হোক। আপনারা ধৈর্য ধরুন। এটা সকলের আবেগ। বস্তুত এর আগে এভাবে দলের সংসদীয় দলের বৈঠকে সরব হওয়ার উদাহরণ দেখা যায়নি। কিন্তু হঠাৎ করে রামমন্দির নিয়ে এভাবে স্পষ্ট দাবি তোলার ঘটনায় বিস্ময় সৃষ্টি হয়েছে দলের অন্দরেই।
উল্লেখ্য, যে দুজন সাংসদ প্রশ্ন তুলে দলের শীর্ষস্তর তথা সরকারকে বার্তা দিয়েছেন, তাঁরা দুজনেই যোগী আদিত্যনাথের ঘনিষ্ঠ। আদিত্যনাথ ক্রমেই দলের হিন্দুত্ববাদী অংশের রোলমডেলে পরিণত হচ্ছেন। তাই আগামীদিনে লোকসভা ভোটের আগে বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে চাপ দিয়ে তিনি সম্ভবত বার্তা দিচ্ছেন দলের একমাত্র এজেন্ডা হওয়া উচিত রামমন্দির।
রাজনীতিবিদদের একাংশের মতে, এই পরিস্থিতি আসলে বিজেপি’র রাজনৈতিকভাবে দুর্বল হওয়ারই বার্তা। তাঁদের দাবি, বিক্ষুব্ধ শরিক শিবসেনার মতো এবার খোদ দলের হিন্দুত্ববাদী অংশও সরাসরি প্রশ্ন করতে শুরু করার অর্থ সঙ্ঘ পরিবারের কন্ঠস্বর বিজেপির তথা সরকারের মধ্যে আরও শক্তিশালী হচ্ছে।