বেশ কিছুদিন ধরেই টেলিভিশনে বিজ্ঞাপন দেখানো হচ্ছে নিজের ইচ্ছামত চ্যানেল বেছে নেওয়ার জন্যে এবং শুধু সেই ক’টি চ্যানেলের জন্যেই টাকা দিতে। বিজ্ঞাপনটি দেখে আপাত ভাবে সুবিধা জনক মনে হলেও, কেন্দ্রীয় সরকার কখনই সাধারণ মানুষের সুবিধাজনক পদক্ষেপ নেয়নি। তাই দেখে সুবিধাজনক মনে হলেও আসলে এর ফলে টিভি দেখার খরচ বাড়বে বলেই মনে করা হচ্ছে।
টেলিভিশনে নিজের পছন্দমত চ্যানেল দেখার এই নিয়ম চালু হচ্ছে ২৯ ডিসেম্বর। টেলিকম রেগুলেটরি অথরিটি অফ ইন্ডিয়া চাইছে দর্শক তাঁদের পছন্দের চ্যানেলগুলিই দেখুন এবং তার জন্যেই দাম দিন। এই নিয়মের জেরে দর্শক নিজেই বেছে নেওয়ার সুযোগ পাবেন পছন্দের চ্যানেলগুলি। এবারে ১০০ টি ফ্রি টু এয়ার চ্যানেলের জন্যে গ্রাহকদের বাধ্যতামূলক ভাবে দিতে হবে ১৫৪ টাকা, তার সাথে পছন্দের চ্যানেলগুলির জন্যে নির্ধারিত দামও যোগ হবে। এখানেই কোপ পরতে চলেছে সাধারণ মানুষের ঘাড়ে। গ্রামের দিকে এখনও কম খরচে বেশি চ্যানেল দেখানো হয়, এই নিয়মের ফলে সেখানে খরচ বাড়বে এক ধাক্কায় অনেকটা। শহরে টিভির খরচ এমনিই বেশি, এবার সেখানেও খরচ আরও বাড়বে।
কেবল অপারেটর্স সংগ্রাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক অপূর্ব ভট্টাচার্যের কথায়, দর্শক যদি ফ্রি টু এয়ারের পর দু’টি বা তিনটি করে কার্টুন, সংবাদ, সিরিয়াল, সিনেমা বা খেলার চ্যানেল দেখেন, তাতেই তাঁকে এখনকার থেকে অনেকটা বেশি খরচ গুনতে হবে। একটি নতুন এমএসও সংস্থার ডিরেক্টর অলোক জানা জানিয়েছেন, ট্রাইয়ের নির্দেশ মতো ১০০টি ফ্রি টু এয়ার চ্যানেলের পর যদি কেউ পে- চ্যানেল নেন, তাহলে তাঁকে ২৫টি পর্যন্ত পে-চ্যানেলের জন্য ‘নেটওয়ার্ক ক্যাপাসিটি ফি’ বাবদ ২০ টাকা করও দিতে হবে। গ্রাহক একটি পে-চ্যানেলই নিন বা ২৫টি, খরচ ওই একই।
যদিও টেলিকম অথরিটি জানিয়েছে, কোনও ব্যক্তি ফ্রি টু এয়ার চ্যানেলের সঙ্গে একটি মাত্র পে-চ্যানেলও নিতে পারেন। এই বিষয়ে তাঁর স্বাধীনতা আছে। কিন্তু আসলে যে এতে কোনও সুবিধাই নেই তা সবারই জানা। কারণ মাত্র একটি চ্যানেল যে কেউই তেমন নেবেন না, এমনটাই জানাচ্ছেন কেবল অপারেটর্সরা।
বিভিন্ন চ্যানেল সংস্থা তাদের চ্যানেলগুলিকে নিয়ে আবার ছোট ছোট প্যাকেজ তৈরি করেছে। সেখান থেকেও গ্রাহক চ্যানেল পছন্দ করতে পারেন। ট্রাই নিয়ম করেছিল, চ্যানেল কর্তৃপক্ষের ঘোষিত প্যাকেজে যে চ্যানেলগুলি থাকবে, তাদের প্রত্যেকটির নিজস্ব দরের যোগফলের ৮৫ শতাংশের নীচে নামবে না প্যাকেজের দর। অর্থাৎ, যদি কোনও চ্যানেল কর্তৃপক্ষ তাদের ১০ টাকা দামের ১০টি চ্যানেলের প্যাকেজ করে, তাহলে তার দর ৮৫ টাকার নীচে নামতে পারবে না। কিন্তু এই বিষয়টি এখন সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন। তাই আপাতত নিয়মে স্থগিতাদেশ রেখেছে ট্রাই। চ্যানেলের দর একবার ঘোষণা হলে, তা অন্তত ছ’মাস বদলাতে পারবে না কর্তৃপক্ষ।
একে তো কিছুদিন অন্তর রান্নার গ্যাসের দাম বৃদ্ধি, পেট্রোলের দাম বৃদ্ধি এরপর মানুষের বিনোদনের ওপরেও পড়তে চলেছে মোদীর আচ্ছে দিনের কোপ।