মনমোহন সিং সরকারের জমানায় গুজরাতের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কটাক্ষ করে বলতেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর মতোই ভারতীয় মুদ্রা নীরব হয়ে পড়েছে!’ তাঁর সেই সব ভাষণে-বক্তৃতা শুনে অনেকেই মনে করতেন আগামী দিনে ম্যাজিক হবে! মোদী প্রধানমন্ত্রী হতেই, ভারতীয় মুদ্রা শক্তিশালী হবে, মুদ্রাস্ফীতির হার কমবে, পেট্রল, ডিজেল, রান্নার গ্যাসের দাম কমে যাবে এক ধাক্কায়। কিন্তু মোদী জমানায় দীর্ঘ ৮ বছর ধরে যে ‘আচ্ছে দিন’ দেখছে দেশ, তাতে প্রাণ ওষ্ঠাগত আমজনতার। এরই মধ্যে শনিবার ফের রান্নার গ্যাসের দাম ফের ৫০ টাকা বেড়েছে। কলকাতায় ১৪.২ কিলোগ্রামের রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডারের দাম দাঁড়িয়েছে ১০২৬ টাকা। আট বছর আগে ২০১৪ সালের মার্চ মাসে মনমোহন জমানার শেষ দিকে রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডার পিছু দাম ছিল ৪১০ টাকা। অর্থাৎ সোজা হিসাবে দাম বেড়েছে আড়াই গুণ তথা ১৫৪ শতাংশ।
শুধু তাই নয়। বহু ঢাক ঢোল পিটিয়ে কেন্দ্রে মোদী সরকার যে উজ্জ্বলা যোজনা ঘোষণা করেছিল, তাদেরও এখন সিলিন্ডার কিনতে হবে এই দাম দিয়ে। কারণ, ২০২০ সাল থেকেই ওই যোজনায় ডাইরেক্ট বেনিফিট ট্রান্সফার তুলে দিয়েছে কেন্দ্র। এখন প্রশ্ন হল, এ দেশে দারিদ্র সীমার নিচে বসবাসকারী মানুষের কি এত দাম দিয়ে রান্নার গ্যাস কেনার ক্ষমতা রয়েছে? রান্নার গ্যাসের দাম ঠিক কী কারণে বাড়ল? কাঁচা পেট্রোলিয়াম তেলের জন্য ভারতের এখন খরচ পড়ে ব্যারেল প্রতি ১১৫.৪ ডলার। ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে যা ছিল মাত্র ৪১ ডলার। এই মূল্য নির্ধারণ করে সৌদি আরবের রাষ্ট্রায়ত্ত তেল উৎপাদক সংস্থা আরামকো। এর অর্থ হল, প্রতি লিটার কাঁচা তেলের দাম ভারতীয় মুদ্রায় মোটামুটি ৫৫ টাকা। এর সঙ্গে উৎপাদন খরচ, পরিবহণ বাবদ খরচ, বটলিং বাবদ খরচ ও পণ্য পরিষেবা কর যুক্ত করে চূড়ান্ত দাম স্থির করা হয়।
ভারতে যে এলপিজি গ্যাস পাওয়া যায় তাতে বিউটেন ও প্রপেন গ্যাস থাকে। মার্চ মাসে সৌদি আরামকো চুক্তি মূল্য প্রতি মেট্রিক পিছু ৬২৫ জলার করেছে যা ফেব্রুয়ারির থেকে ২০ ডলার বেশি। একই ভাবে বিউটেনের দাম প্রতি মেট্রিক টনে ১০ ডলার বেড়ে ৫৯৫ ডলার হয়েছে। তা ছাড়া মোদী আট বছর আগে যে কটাক্ষ করেছিলেন তা এখন ব্যুমেরাং হয়ে ফিরে এসেছে। ভারতীয় মুদ্রার আরও অবমূল্যায়ন হয়েছে তাঁর জমানায়। মনমোহন জমানায় প্রতি ডলারের দাম ছিল ভারতীয় মুদ্রায় ৬০ টাকার আশপাশে। এখন ডলারের হিসাবে ভারতীয় মুদ্রার দাম কমে প্রায় ৭৭ টাকা হয়েছে। ফলে আমদানি খরচ অনেক বেড়ে গেছে। পেট্রোল, ডিজেল, রান্নার গ্যাসের দাম বাড়ার সেটাও বড় কারণ। সর্বোপরি রান্নার গ্যাসে ভর্তুকি মোদী সরকার অনেক কমিয়ে দিয়েছে। মনমোহন জমানায় শেষ দু’বছরে পেট্রোপণ্যে ভর্তুকি ছিল ৩৯,৫৫৮ কোটি টাকা ও ৪৬,৪৫৮ কোটি টাকা। তা কমে ২০২১-২২ আর্থিক বছরে হয়েছে মাত্র ১২,৮৪০ কোটি টাকা।