জন্মসূত্রে তিনি হিন্দু। পরবর্তীকালে যে ধর্ম বদল করে মুসলিম হয়েছেন, তা-ও নয়। কিন্তু বাংলার তথা সারা দেশের এক অন্যতম খুশির উৎসব ইদ-উল-ফিতরে সামিল হয়ে হাজারো লোকের সঙ্গে নামাজ পড়তে ধর্ম কখনই বাধা হয়নি দুর্গাপুরের বাসিন্দা উদয়ন মৈত্রর। নয়-নয় করে এবার পঁচিশ বছর হয়ে গেল তারই। রেড রোডের নামাজে তাঁকে সিকি শতক ধরেই দেখতে পাচ্ছেন সবাই। তবে শুধু ইদের দিনের নামাজ নয়। প্রতিবছর রমজান মাসে নিয়ম করে রোজাও পালন করেন পেশায় অধ্যাপক উদয়ন। এবছরও সারা মাস ধরে রোজা রেখে, গতকাল সোমবারই দুর্গাপুরের বাড়ি থেকে কলকাতায় চলে আসেন তিনি।
প্রসঙ্গত, দুর্গাপুরের ইনস্টিটিউশন অফ সায়েন্সের টেকনোলোজি অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগে পড়ান উদয়ন। তাঁর নিচু ক্লাসের পড়াশোনা দুর্গাপুরের সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুলে। পরে কলকাতায় সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুল ও কলেজে পড়ার সূত্রে বহু বছর কাটিয়েছেন হেস্টিংস এলাকায়। তার পরে এখন ফের দুর্গাপুরে ফিরেছেন পেশার সূত্রে। তিনি বলেন, ‘সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুল, কলেজ এবং হেস্টিংসের মিশ্র বসত এলাকায় বেড়ে ওঠার সুবাদেই আমার মধ্যে অবচেতনেই সব ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা, কৌতূহল তৈরি হয়েছিল। একটু বড় হয়ে উপলব্ধি করেছি, সম্প্রীতি, ঐক্য রক্ষায় বড় ভূমিকা নিতে পারে ধর্মীয় উৎসবে অংশগ্রহণ। আমি তাই বড় দিনে গির্জার প্রার্থনা সভা, ইদের নমাজ, দুর্গাপুজোর অষ্টমীর অঞ্জলি জমায়েত, সব কিছুতেই আছি।’
উদয়ন আরও জানান, এই ইদ পালনের জন্য তাঁকে এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের কম গঞ্জনা সইতে হয়নি। এখনও চলছে সে সব। তাঁর কথায়, ‘কেউ কেউ আমার স্ত্রীকে এমন কথাও বলেছে, ভাল করে খোঁজ নাও। বিয়ের আগে নিশ্চয়ই ধর্ম গোপন করেছিল।’ এদিন রেড রোডের প্রার্থনা শেষে উদয়ন বলেন, ‘এতদিন মা-ই তো ইদের আগে নতুন পাজামা পাঞ্জাবি কিনে দিতেন, নিজে ইস্ত্রি করে দিতেন। এখন বয়সের ভারে পারেন না।’ তবে বছর দু’তিন হল, আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের আধিকারিক মহম্মদ মইনুল হক উদয়নকে ইদের পাজামা-পাঞ্জাবি উপহার দিয়ে আসছেন। উদয়নের কথায়, ‘ধর্মের আসল পরিচয় বিভেদে বা বিদ্বেষে নয়, সহিষ্ণুতায়। তাই দুটি বা তিনটি ধর্মকেও এভাবেই নিজের মধ্যে বয়ে বেড়াতে পারে যে কোনও মানুষ।’