এবছরের দুর্গাপুজোর আগেই চালু হতে চলেছে উত্তর কলকাতা ও উত্তর শহরতলির ব্যস্ততম সেতু টালা ব্রিজ। ৪৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ৭৫০ মিটার দীর্ঘ নবপর্যায়ের সেতুটিও মাঝেরহাটের আদলে কেবল স্টেড রেলওভার ব্রিজ হিসাবে আত্মপ্রকাশ করছে। এর মধ্যে ২৪০ মিটার অংশ কেবলের উপরেই শূন্যে ঝুলবে। শুধু তাই নয়, আগে ছিল তিন লেনের সেতু, কিন্তু নয়া ব্রিজটি যেমন চার লেনের হচ্ছে তেমনই দু’পাশেই থাকছে ফুটপাথ
বিগত ১৯৬৩ সালে নির্মিত পুরনো ভেঙে ফেলা টালা ব্রিজটি মাত্র ১৫০ টন ভারবহন করতে পারত। রাজ্য পূর্ত দপ্তরের দাবি, নয়া কেবল স্টেড সেতুটির ভারবহন সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়ে হচ্ছে ৩৮৫ টন। কলকাতা পুরসভার ডেপুটি মেয়র তথা কাশীপুর-বেলগাছিয়ার বিধায়ক অতীন ঘোষ শনিবার বলেন, “করোনার জেরে মাঝে গতি শ্লথ হলেও এখন পূর্ত দফতরের পাশাপাশি পুরসভাও নির্মাণ দ্রুত সম্পূর্ণ করতে নজরদারি চালাচ্ছে। এখন যে গতিতে দিনে-রাতে কাজ চলছে তাতে পুজোর আগেই মুখ্যমন্ত্রী ব্রিজটি সাধারণের জন্য উদ্বোধন করতে পারবেন।”
উল্লেখ্য, নয়া সেতু চালু হলেই উত্তর কলকাতার পাশাপাশি গতি বাড়বে উত্তর ২৪ পরগনা, নদীয়া, মুর্শিদাবাদ-সহ দক্ষিণবঙ্গের বিস্তীর্ণ অংশে। দাবি পূর্ত দপ্তরের শীর্ষ ইঞ্জিনিয়ারদের। মাঝেরহাট ব্রিজ ভেঙে পড়ার পর মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে কলকাতা-সহ গোটা রাজ্যেই সমস্ত সেতুর স্বাস্থ্যপরীক্ষা হয়। দেখা যায়, প্রায় ৫৬ বছর আগে তৈরি টালা ব্রিজ খুবই বিপজ্জনক অবস্থায় দাঁড়িয়ে। এরপরই ২০২০ সালের ৩১শে জানুয়ারি রাত থেকেই পুরনো ব্রিজ ভাঙা শুরু হয়। টালা সেতুর নয়া নকশা ওই বছর ২২শে ডিসেম্বর রেলের অংশের অনুমোদন দেয় রেলবোর্ড, নির্মাণ শুরু হয় ২০২১ সালের জানুয়ারি। এদিন নির্মীয়মাণ ব্রিজে গিয়ে দেখা যায়, ৭০ শতাংশের বেশি কাজ সম্পূর্ণ। শ্যামবাজার ও সিঁথির দিক দিয়ে সেতু নির্মাণ শুরু হলেও এখন রেললাইনের উপরের অংশ জুড়ে যায়নি। সেতু সম্পূর্ণ হওয়ার পর ফের রেলের সেফটি কমিশনার এসে পরিদর্শন করার পরই কেবল স্টেড ব্রিজ চালুর অনুমতি দেবেন। যেহেতু ব্রিজটি প্রায় ৭৫০ মিটার দীর্ঘ, তাই মাঝে শ্যামবাজার, চিৎপুর ও সিঁথির দিকে নামার জন্য সিঁড়ির ব্যবস্থা থাকছে। রেলের অংশে কোনও পিলার থাকছে না, পুরোটাই ঝুলবে কেবলে।
প্রসঙ্গত, প্রথমে বাজেটে না থাকলেও পরে অ্যাপ্রোচ রোডের জন্য অতিরিক্ত ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার ব্রিজের নিচের অঞ্চলের নিকাশি পরিকাঠামো পূর্ত দফতরের অর্থেই তৈরি করছে কলকাতা পুরসভা। ব্রিজটি চালু হয়ে গেলে বর্তমানে যে বিকল্প পথে গাড়ি চলাচল করছে সেগুলি আরও উন্নত করে বজায় রাখা হবে। স্বভাবতই দু’টি রুট থাকায় উত্তর কলকাতা ও শহরতলির বাসিন্দাদের যানবাহন চলাচলে বাড়তি সুবিধা পাওয়া যাবে। এদিন সেতুর নিচ ও উপরে ইঞ্জিনিয়ারদের নিয়ে পায়ে হেঁটে তদারকি করেন ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ ও বরো চেয়ারম্যান তরুণ সাহা। পরে ডেপুটি মেয়র স্বীকার করেন, “রাস্তা ও অন্যান্য দু-একটি নির্মাণে বিশেষজ্ঞ ইঞ্জিনিয়াররা প্রশ্ন তুলেছেন। তাই সিদ্ধান্ত হয়েছে, বিষয়গুলি নিয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়া হবে।” করোনাকালে কয়েক মাস টালা ব্রিজের নির্মাণ শ্লথ হলেও অতিরিক্ত শ্রমিক ও যন্ত্রপাতি নিয়ে দ্বিগুণ গতিতে এখন কাজ করছে লারসেন অ্যান্ড টুবরো। পুরসভা ও পূর্ত দপ্তর উভয়েরই টার্গেট, পুজোর আগেই দক্ষিণবঙ্গবাসীকে নতুন টালা ব্রিজ উপহার দেওয়া।