একেবারে রবিবাসরীয় মহারণের আদর্শ মৌতাত। এদিন সকাল থেকে কলকাতা শহরের সব রাস্তা গিয়ে মিশেছিল একটিই জায়গায়। সে উত্তর হোক বা দক্ষিণ, পূর্ব হোক বা পশ্চিম, সকাল থেকে কলকাতার ফুটবলপ্রেমীদের গন্তব্য ছিল যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন। আই লিগের প্রথম ডার্বি। দুই দলেরই অবস্থা বেশ খরাপ। চ্যাম্পিয়নশিপের লড়াইয়ে যাওয়ার কোনও সুযোগ নেই বললেই চলে। এই অবস্থায় প্রথম ডার্বি খেলতে নেমেছে ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান। যে দল জিতবে সেই ফিরে আসবে চ্যাম্পিয়নশিপের লড়াইয়ে। তাই এই ডার্বির গুরুত্ব ডার্বি আবেগের মাত্রা ছাড়িয়ে অন্যমাত্রা পেয়েছিল। দু’দলের খেলোয়াড়দের হাতে ধরা প্ল্যাকার্ডে লেখা, “মাঠের লড়াই মাঠে থাকুক, জিতুক ফুটবল।”
ম্যাচ শুরুর ১৩ মিনিটে মধ্যে অনূধ্ব-২২ ফুটবলার আজহারউদ্দিন মল্লিকের গোলে এগিয়ে গিয়েছিল মোহনবাগান। বাঁ দিক থেকে ওমরের ক্রস ধরতে গোল ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিলেন ইস্টবেঙ্গল গোলকিপার রক্ষিত দাগার। কিন্তু বলের ফ্লাইট মিস করে যান। ইস্টবেঙ্গল রক্ষণও ছিল না জায়গায়। যার ফলে সেই ফ্রি খুব সহজেই ইস্টবেঙ্গল গোলে ঢেলেন আজহার।
কিন্তু ৪০ মিনিটে আজহারকে তুলে নিয়ে কেন মোহনবাগান কোচ শেখ ফৈয়াজকে নামালেন সেটা একটা বড় প্রশ্ন। তিনি কিছু তো করতেই পারলেন না বরং ডার্বিতে গোল করে হিরো হয়ে যাওয়ার কথা ছিল আজহারের যদি মোহনবাগান জিতত। সেই আত্মবিশ্বাসেও তাঁর জোড় ধাক্কা লাগল স্বাভাবিকভাবেই।
চার মিনিটের মধ্যেই খেলায় ফিরল ইস্টবেঙ্গল। জবি জাস্টিন, কোলাডো নিজেদের মধ্যে পাস খেলে বক্সের মধ্যে বল বাড়িয়েছিলেন জবি। সেখান থেকেই লালডানমাউইয়ার গোলে সমতায় ফেরে ইস্টবেঙ্গল। যদিও এই গোল নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। অফ সাইড দিলেও কিছু বলার থাকত না। এর পর থেকে ৭০ মিনিট পর্যন্ত ম্যাচ থাকল ইস্টবেঙ্গলেরই দখল।
৪৩ মিনিটে জবি জাস্টিনের গোল। এই গোলের পিছনে ভূমিকা রেখে গেলেন লালডানমাউইয়া। মনোজ মহম্মদের ক্রস হেড করে নামিয়ে দিলেন জবির পায়ে। জবির সাইড ভলি চলে গেল সরাসরি গোলে। ২-১এ এগিয়ে গেল ইস্টবেঙ্গল।
প্রথমার্ধের খেলা শেষ হল ২-১ গোলে। যেখনে প্রথমার্ধ শেষ করেছিল ইস্টবেঙ্গল সেখান থেকেই দ্বিতীয়ার্ধ শুরু করল। ৫৯ মিনিটে জোড় ধাক্কা খেল মোহনবাগান। জোড়া হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়তে হল কিংসলেকে। মোহনবাগানের ১০ জন হয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ৩-১ গোলে এগিয়ে গেল ইস্টবেঙ্গল। ৬১ মিনিটে আবারও সেই লালডানমাউইয়া।
লালরিনডিকা রালতের ডানদিক থেকে একটা মাপা ফ্রিকিকে বক্সের মধ্য্যেই হেড করেছিলেন লালডানমাউইয়া। কিন্তু সেই বল বাঁচিয়ে দেন গোলকিপার শঙ্কর। ফিরতি গোল সম্পূর্ণ করেন লালডানমাউইয়া।
কিন্তু একটা সময় ১০ জনেই ইস্টবেঙ্গলকে চেপে ধরে মোহনবাগান। ইস্টবেঙ্গলকে দেখা যায় রক্ষণে লোক বাড়িয়ে গোল সামলাতে। তার মধ্যেই ৭৪ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে ডিকার দুরন্ত এক শটে ২-৩ করে মোহনবাগান। এরপর সুযোগ আসে দুই দলের সামনে কিন্তু আর গোল হয়নি। ৮৫ মিনিটে জবি জাস্টিন ওপেন নেট মিস না করলে ব্যবধান বাড়তে পারত ইস্টবেঙ্গলের।
অনেকদিন পর জয় তাও আবার ডার্বি। উৎসব তো হবেই। তাই ম্যাচ শেষে মাঠ ঘুরে ভিক্ট্রি ল্যাপ দিতে ভুললেন না ফুটবলাররা। হাসি ফুটল সমর্থকদের মুখে। ম্যাচ শেষ হতেই হতাশায় ফাঁকা হয়ে গেল মোহনবাগান গ্যালারি আর তখনই হাজার ওয়াটের আলো জ্বলে উঠল ইস্টবেঙ্গল গ্যালারিতে। জোড়া গোল করলেন, একটি গোল করালেন। ম্যাচের সেরাও হলেন। এই ডার্বির নায়ক তিনিই। তিনি লালডানমাউইয়া।