২০২০-তে দেশে থাবা বসিয়েছিল করোনা ভাইরাস। অতিমারী-লকডাউন থেকে শিক্ষা নিয়েছে বঙ্গবাসী। হাতে টাকা জুগিয়ে মহিলাদের স্বনির্ভর করে তোলাই ছিল রাজ্য সরকারের মূল লক্ষ্য। রাজ্যের ক্ষমতায় তৃতীয় ইনিংসের বর্ষপূর্তির মুখেও সেই লক্ষ্যে অবিচল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। বাজেটে অর্থের সংস্থান করাই ছিল। অর্থবর্ষ শেষ হওয়ামাত্র তাই বাংলার আরও ২৩ লক্ষ মহিলাকে নিয়ে আসা হল ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ প্রকল্পের অধীনে। আগামী ৫ই মে, তৃতীয় মা-মাটি-মানুষের সরকারের এক বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই সরাসরি তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ঢুকবে ৫০০ অথবা ১০০০ টাকা। এর জন্য প্রতি মাসে প্রায় ২৪০ কোটি টাকা খরচ বাড়ল রাজ্য কোষাগারের।
প্রসঙ্গত, গত বছর বিধানসভা নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার চার মাসের মধ্যে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার চালু করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। দুয়ারে সরকার শিবিরের মাধ্যমে আবেদন গ্রহণ করা হয়। দুর্গাপুজোর আগেই রাজ্যের ১ কোটি ৫৩ লক্ষ ৮ হাজার ২৮২ জন মহিলার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ঢুকে যায় প্রকল্পের নির্দিষ্ট অর্থ। তফসিলি জাতি-উপজাতির ক্ষেত্রে টাকার অঙ্ক ১০০০, অন্যান্যদের জন্য ৫০০। গত ছ’মাস ধরে ৩ তারিখের মধ্যেই তা জমা পড়েছে। চলতি এপ্রিল মাসে অবশ্য এর ব্যতিক্রম হয়েছে। সুযোগ বুঝে গুজব ছড়াতেও দেরি হয়নি। তবে যাবতীয় জল্পনা উড়িয়ে দিয়েছে নবান্ন। রাজ্যের এক শীর্ষ আধিকারিক জানিয়েছেন, নতুন অর্থবর্ষের প্রথম মাস হওয়ার জন্যই এপ্রিলে টাকা ঢুকতে দেরি হয়েছে। কারণ, রীতি অনুযায়ী বাজেটের পর বরাদ্দ অনুমোদনে অর্থদপ্তরের ছাড়পত্র প্রয়োজন। ফলে টাকা ছাড়ার প্রক্রিয়া শুরুই হয়েছে খানিক দেরিতে। এই মুহূর্তে অবশ্য সব কাজ শেষ কাজ শেষ। ১৫ এপ্রিলের মধ্যে উপভোক্তাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকে যাবে।
উল্লেখ্য, গত দু’দফায় দুয়ারে সরকার ক্যাম্পে সবথেকে বেশি উন্মাদনা ছিল লক্ষ্মীর ভাণ্ডার নিয়ে। গত মাসে আয়োজিত শিবিরে আবেদন জমা পড়েছিল ২২ লক্ষ ৮৩ হাজার ৩৬৬টি। ২২ লক্ষ ১১ হাজার ২৪০ জনের আর্জি অনুমোদিত হয়েছে। এর মধ্যে তফসিলি জাতিভুক্ত উপভোক্তা ২ লক্ষ ৭৬ হাজার ৪৯৩ জন আর তফসিলি উপজাতি ৫২ হাজার ১৯৭। চলতি এপ্রিল মাস থেকে তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকবে। নবান্নের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, নতুন উপভোক্তার নিরিখে সবথেকে এগিয়ে উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, উত্তর দিনাজপুর ও হুগলী জেলা। চলতি মাস থেকে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পে উপকৃত হবেন মোট ১ কোটি ৭৫ লক্ষ ১৯ হাজার ৫২২ জন। ফলে এই খাতে প্রতি মাসে রাজ্যের খরচ বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১০৯০ কোটি টাকা। গত মার্চ মাস পর্যন্ত যা ছিল প্রায় ৮৫০ কোটি। আগামী এক বছরে এই প্রকল্পে মোট ১৩ হাজার ৮০ কোটি টাকা ব্যয় হবে। সূত্রের খবর, প্রয়োজনীয় নথি জমা না দেওয়ায় ৪৪ হাজার ৬৭৩টি নতুন আবেদন মঞ্জুর করা যায়নি। প্রথম বছরে ঠিক একই কারণে বাদ গিয়েছিল প্রায় ৮০ হাজার আর্জি। যদিও স্বয়ং বাড়ি বাড়ি অফিসার পাঠিয়ে সমস্যার সমাধানের নির্দেশ দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবারও তেমনই পরিকল্পনা করছে নারী, শিশু উন্নয়ন এবং সমাজকল্যাণ দফতর।