আমরা যতই নিজেদের আধুনিক দেখাই না কেন, গতানুগতিক মানসিকতা বদলাতে এখনও কেউই পেরে উঠিনি বোধহয়। জন্ম মৃত্যু বিয়ে, তিন বিধাতা নিয়ে কথাতেই আছে। সেই বিয়ের মতো এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে ‘পণপ্রথা’ একুশের সমাজকে একটানে মধ্যযুগে নিয়ে গিয়ে ফেলে।
বিয়েতে পণ নেওয়ার বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরেই সরব সুশীল সমাজ। এদেশে বহুদিন আগেই তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে আইন করে। কিন্তু সমাজ থেকে কি আজও পুরোপুরি বিদায় নিতে পেরেছে কুরুচিকর এই প্রথা? হয়তো না। পাঠ্য বইতেই আজও জ্বলজ্বল করে ‘পণের সুফল’, জ্বলজ্বল করে পিতৃতন্ত্র।
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ার ছোটদের পাঠ্য বইয়ের একটা পৃষ্ঠার ছবি ভাইরাল হয়েছে। সেখানেই দেখা গেছে পয়েন্ট করে করে লেখা রয়েছে পণপ্রথার ভাল দিকগুলি কী কী। আর সেই লেখার শেষ পয়েন্ট দেখে গর্জে উঠেছেন নেটিজেনরা, গর্জে উঠেছেন শুভবুদ্ধিসম্পন্ন সকলেই।
বইটির ছবি ভাইরাল হওয়া মাত্র নড়েচড়ে বসেছে শিক্ষামহল। রাজ্যসভার শিবসেনা সাংসদ প্রিয়াঙ্কা চতুর্বেদী এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। এই ধরনের বই দ্রুত সিলেবাস থেকে বাদ দেওয়ার দাবিও করেছেন তিনি।
পণ হিসেবে বিয়েতে শুধু টাকাই নয়, খাট-আলমারির মতো আসবাবপত্রও দেওয়ার চল রয়েছে। ওই বইতে এই পণপ্রথার সুফল হিসেবে লেখা রয়েছে, পণপ্রথার মাধ্যমে নতুন খাট আলমারি কিংবা অন্যান্য আসবাব দিয়ে সাজিয়ে তোলা যায় নতুন সংসার।
এখানেই শেষ নয়, আরও একটি পয়েন্টে লেখা রয়েছে, পণের মাধ্যমেই মেয়েরা পৈতৃক সম্পত্তির ভাগ পায়। পণপ্রথার আরও এক ভাল দিক হল, এর জন্যেই মেয়েদের বেশি করে লেখাপড়া শেখাতে শুরু করেছেন অভিভাবকরা, যাতে শিক্ষিত মেয়ের বিয়ে দেওয়ার সময় পণের টাকা কম দিতে হয়। আইনত নিষিদ্ধ এক প্রথার তথাকথিত ‘সুফল’ কীভাবে একটা পাঠ্যবইতে এভাবে প্রচার করা হচ্ছে, সেই প্রশ্ন তুলেছেন নেটিজেনরা। বইটিকে অবিলম্বে বাতিল করার দাবি উঠেছে।