রাজ্যে ফের ভোটের বাদ্যি বেজে গিয়েছে। আগামী ১২ এপ্রিল আসানসোল লোকসভা কেন্দ্র এবং বালিগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন। কিন্তু এবার আর ভোট প্রচারে অংশ নেবেন না বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার রাজ্য বিজেপির পক্ষ থেকে দুই কেন্দ্রের উপনির্বাচনে কারা প্রচারে অংশ নেবেন, তার তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু ৪০ জনের সেই তালিকায় নাম নেই লকেটের। এতেই গোঁসা হয়েছে তারকা সাংসদের। সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘তালিকায় নাম নেই মানে আমাকে দল গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে না। সুতরাং, ইচ্ছা থাকলেও আমি আর প্রচারে অংশ নেব না।’
সংসদের অধিবেশন চলায় লকেট এই মুহূর্তে দিল্লীতে রয়েছেন। তিনি জানান, প্রচারে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে তাঁর সঙ্গে দলের অপর রাজ্য সম্পাদক জ্যোতির্ময় সিংহ মাহাত এবং রাজ্য সহ-সভাপতি অর্জুন সিংহের সঙ্গে কথাও হয়েছিল। দুই সাংসদকেই তিনি জানিয়েছিলেন, সংসদে অধিবেশন চললেও ছুটির দিনগুলিতে তিনি কলকাতা ও আসানসোলে গিয়ে প্রচারে নামবেন। কিন্তু দল যখন এর পরেও তালিকায় নাম রাখেনি, তখন তিনি নিজেকে ব্রাত্য মনে করছেন। এদিকে, লকেটের বক্তব্য শুনে অর্জুন সিং বলেন, ‘কেউ যদি প্রচারে না নামতে চান, তাতেও আমার কিছু বলার নেই।’
প্রসঙ্গত, এবার বালিগঞ্জে প্রার্থী হয়েছেন রাজ্য বিজেপির অন্যতম মুখপাত্র কেয়া ঘোষ। অন্য দিকে, আসানসোলের প্রার্থী লকেটের সঙ্গেই রাজ্যের সাধারণ সম্পাদক হওয়া বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল। দুই প্রার্থীই আগে মহিলা মোর্চার নেত্রী ছিলেন। আর তখন মহিলা মোর্চার রাজ্য সভানেত্রী ছিলেন লকেট। কিন্তু সেই লকেটই কেয়া ও অগ্নিমিত্রার প্রচারে আসতে নারাজ। লকেট এদিন বলেন, ‘আমাদের দলে ইচ্ছা মতো কিছু করা যায় না। সব কিছুতেই দলীয় নির্দেশ মান্য করতে হয়। আমার নাম তালিকায় নেই মানে, নেতৃত্বের কোনও নির্দেশ নেই। তাই আমি নিজের থেকে প্রচারে নামতে পারি না। তবে আমার খুবই ইচ্ছা ছিল। যাই হোক, নেতৃত্ব যখন আমায় গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন না তখন আর প্রচারে অংশ নিচ্ছি না।’
উল্লেখ্য, লকেটকে নিয়ে ইদানীং কালে রাজ্য বিজেপি-র মধ্যে নানা জল্পনা তৈরি হয়েছে। গত পুরসভা নির্বাচনের সময়ে লকেট রাজ্যে কোনও প্রচারেই অংশ নেননি। সেই সময়ে উত্তরাখণ্ড বিধানসভা নির্বাচনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। কিন্তু উত্তরাখণ্ডের ভোটপর্ব মিটে গেলেও লকেট বাংলায় আসেননি। আবার দলের বিক্ষুব্ধ নেতাদের সঙ্গেও লকেটের নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। সম্প্রতি বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়া জয়প্রকাশ মজুমদার থেকে বিক্ষুব্ধ সায়ন্তন বসু, রীতেশ তিওয়ারিদের সঙ্গে একাধিক বৈঠকে দেখা গিয়েছে তাঁকে। দলের সাংগঠনিক বৈঠকেও নেতৃত্বের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তোলেন তিনি। এই সব কারণে রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে খানিক দূরত্ব তৈরি হয়েছে লকেটের। এবার দুই উপনির্বাচনের প্রচার নিয়ে তৈরি হওয়া বিতর্ক সেই দূরত্ব আরও বাড়াবে বলেই মনে করা হচ্ছে।