আজও দোলপূর্ণিমা মানেই ফুটকড়াই। নীহাররঞ্জন বাবু ও সুকুমার সেন; দুজনেই লিখে গিয়েছেন এককালে ছানার মিষ্টি ছিল ব্রাত্য। নিরেট চিনি বা ক্ষীরের মিষ্টিই স্থান পেতে ঈশ্বরের প্রসাদের থালায়। তার মধ্যে অন্যতম হল নকুলদানা। বৈষ্ণবপদাবলী থেকে শুরু করে চৈতন্যচরিতামৃত সর্বত্র ছড়িয়ে রয়েছে নকুলদানা।
জগন্নাথ দেবের তিনবেলার ভোগে নকুলদানার উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। নকুলদানার ভিতরে ছোলা ভরা থাকলেই তার নাম হয় ফুটকড়াই । বাংলায় দোলপূর্ণিমার আগের দিন ফুটকড়াইয়ে র বিশেষ চাহিদা থাকে। যদিও এককালে এর চাহিদা ছিল প্রশ্নাতীত।
স্বামী বিবেকানন্দের ভাই মহেন্দ্রনাথ দত্তের লেখায় ফুটকড়াইয়ের উল্লেখ পাওয়া যায়, “সেকালে দোলে তত্ত্ব তৈরি করে আদান প্রদানের প্রথা প্রচলিত ছিল। সেই তত্ত্ব পাড়া প্রতিবেশীদের বাড়ি বাড়ি বিলোনো হত। দোল উপলক্ষে চিনির মুড়কি, মঠ, ফুটকড়াই খাওয়ার রেওয়াজ ছিল।”
শ্রীকৃষ্ণদেবের দোলযাত্রা ও চৈতন্যদেবের আবির্ভাব তিথি উপলক্ষ্যে বিভিন্ন মঠ মন্দিরে বৈষ্ণব ধর্মাবলম্বীরা দোলের দিনটি মহাসমারোহে উৎযাপন করেন। দোল উৎসবের প্রসাদ হিসাবে নানান ধরনের মিষ্টি জাতীয় খাবার প্রস্তুত করা হয় তার মধ্যে মঠ, ফুটকড়াই, মুড়কি বিশেষ উল্লেখযোগ্য।
থালায় প্রচুর মঠ সাজানো থাকত আর পাশে থাকত ফুটকড়াই। রঙ খেলার সাথে সাথে খাওয়ার চল না থাকলেও, দেবতার প্রসাদ হিসাবে কোনওক্রমে বেঁচে আছে। ঐতিহ্যবাহী খাবারটি ক্রমেই হারিয়ে গিয়েছে। খুবই সহজ ও সাধারণ ভাবে ফুটকড়াই তৈরি করা হয়।
দোল খেলার সময়ের মাস্ট আইটেম ছিল এই ফুটকড়াই! দোলের দিন পুজো হোক বা আনন্দ করে রঙ খেলা, সবেতেই এই সব মিষ্টির জায়গা ছিল পাকা। আজ বিলুপ্ত হলে, দোলের দিনের মহাত্মে ভর করে ফুটকড়াই টিকে আছে।
প্রসাদ হিসাবে ছাড়াও বুড়ির ঘর বা হোলিকা দহনের সময় নিভে যাওয়া আগুনের মধ্যে ফুটকড়াই দেওয়ার রেওয়াজ রয়েছে। ছেলেপুলেরা লোকজ ছড়া আজ আমাদের ন্যাড়া পোড়া কাল আমাদের দোল বলতে বলতে ফুটকড়াই বুড়ির ঘরের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া হয়।
নীলমণি দে’র ঠাকুরবাড়িতে দোল পূর্ণিমার ভোগ হিসাবে লুচি-তরকারি, ঘিপোয়া (এক বিশেষ ধরণের মালপোয়া), ফুটকড়াই, মঠ, কদমা, তিলেখাজা ইত্যাদির আয়োজন করা হয়।
একদা রঙ খেলার ফাঁকে ফাঁকে ফুটকড়াই খাওয়া হত। ভাজা ছোলার ওপর চিনির আস্তরণ দিয়ে ফুটকড়াই তৈরি হয় । মুখে দিয়ে চিবালে কড়মড় করে আওয়াজ হত। খাবার খানিক মচমচে ধরনের হয়। খাবার সময় মচমচে আওয়াজ হয়। চুটিয়ে রঙ খেলার ফাঁকে মুখে চালান করা হত।