মঙ্গলবার ৫ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলের পরেই বদলে যায় রাজনৈতিক সমীকরণ। ওই ৫ রাজ্যেই মুখ থুবড়ে প’ড়ে, পদ্ম ফোটাতে ব্যর্থ হয় বিজেপি। ‘মানুষই বিজেপিকে জবাব দিয়েছে’। এমনটাই বলছে অলওয়ারবাসী।
অলওয়ার জেলার মুন্দাওয়াড় গ্রামে গোরক্ষকদের তাণ্ডবের গ্রাউন্ড জিরোতে বসেই সে দিন বিজেপির ভরাডুবির ইঙ্গিত পেয়েছিলেন সেখানকার মানুষ। নির্বাচনের ফলপ্রকাশের পরে দেখা গেল, তাদের আশাই পূরণ হয়েছে হল শেষমেশ। সেখানকার বাসিন্দাদের দাবি, গোরক্ষকদের তাণ্ডবে কুঁকড়ে থাকা অলওয়ারই জবাব দিয়েছে নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহদের দলকে। তাই ২০১৩-র বিধানসভা ভোটে ৯টি আসনে জেতা বিজেপি এ বারে নেমে এসেছে মাত্র ২টিতে।
হরিয়ানা সীমানার এই জেলার অধিকাংশ মানুষের পেশা গবাদি পশুপালন। বেশির ভাগই দুধ ব্যবসায়ী। যেমন ছিলেন পেহলু খান। ২০১৭-য় তাঁকে পিটিয়ে খুন করেছিল গোরক্ষক বাহিনী। ওই ঘটনায় প্রকাশ্যেই মদত যুগিয়েছিল বিজেপি। একই ভাবে ২০১৮য় খুন করা হয়েছিল রাকব্বর খানকেও। দু’ক্ষেত্রেই গোরক্ষকদের দাবি ছিল, ওরা নাকি হরিয়ানায় গরু পাচার করছিল।
পরপর দু’বছরে ওই দু’টি ঘটনা গোটা এলাকাকে মুড়ে ফেলেছিল আতঙ্কে। গোরক্ষকদের ভয়ে জীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠেছিল এলাকাবাসীর। নিজেদের দৈনন্দিন জীবনযাপনের কথা বলতে গিয়ে অলওয়ারের সন্দীপ মীনা বলেন, ‘রাতে টর্চ জ্বালিয়ে বসে থাকতে হয়। আতঙ্কে ভাল করে ঘুমোতেও পারি না। কোনও গরু যদি এদিক-ওদিক চলে যায়, রাজ্যের সীমানা পেরিয়ে!’ ভোটের আগে এমনই অবস্থা হয় সকলের।
রঘুনাথপুর গ্রামের বাসিন্দা রমেশ সিনসিনাওয়াড় তাঁর গত দু’বছরের অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে বলেন, ‘পেহলু খান খুনের পরে পাঁচ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছিল। সবাই বেকসুর ছাড়া পেয়ে বুক ফুলিয়ে ঘুরছে! শুধু ওই পাঁচ জন তো নয়, সেই রাতে প্রায় ২০০ জন চড়াও হয়েছিল পেহলুর উপরে।’ গত বছর মুসলমান প্রধান এই গ্রামের প্রায় ৪০টি বাড়ি লুঠপাট করা হয়েছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। অপরাধ, এরা নাকি গোহত্যায় প্ররোচনা দিচ্ছেন।
তবে বিজেপির মুখ থুবড়ে পড়ার খবরে এখন গোটা এলাকায় এখন খুশির রেশ। ‘অলওয়ার মুখের উপর জবাব দিয়েছে। এই খুনিদের যারা পিছন থেকে উস্কে দিয়েছিল, আজ তাদের কথা বন্ধ’। ভোটের ফলপ্রকাশের পরে এ’কথাই একসুরে বলছে রঘুনাথপুর।