প্রতিবছর ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে চলত চরম ব্যবস্থা। শ্বাস ফেলার ফুরসত পাওয়া যেত না। দেশিবিদেশি পর্যটকদের লাক্সারি বাসে চড়িয়ে কেরলের নানা জায়গায় ঘোরাতে নিয়ে যেতে হত। তবে বছর দুয়েক হল সেই রমরমা আর নেই। অতিমারীর জেরে তলানিতে ঠেকেছে পর্যটন ব্যবসা। কেরলের বহু ব্যবসায়ীর মতো লোকসানের মুখে পড়েছেন রয়সন জোসেফও।কেরলের কোচির বাসিন্দা জোসেফের কাছে এক সময় ২০টি লাক্সারি বাস ছিল। একটি পর্যটন সংস্থাও খুলেছিলেন। নাম দিয়েছিলেন ‘রয়সনস রয়্যাল ট্র্যাভেলস’। তবে অতিমারীতে থমকে গিয়েছে জোসেফের বাসের চাকা। সাধারণত ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে পর্যটকদের ভিড় উপচে পড়ে কেরলে। বছরের ওই সময়ই নাকি কেরলে ঘোরাফেরা করার আদর্শ সময়। স্লিপার্স বা সেমি-স্লিপার্স লাক্সারি বাসমালিকদেরও তাই ওই সময় বেশ রমরমা। পর্যটকদের বাসে চাপিয়ে চষে বেড়াতে হয় রাজ্যের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত। তবে সে সুসময় আর নেই।
প্রসঙ্গত, করোনার বাড়বাড়ন্তের জেরে দেশের ছোটখাটো বহু ব্যবসাই মার খেয়েছে। কেরল-সহ গোটা দেশের পর্যটনশিল্পও ব্যতিক্রম নয়। তবে অন্যান্য শিল্পক্ষেত্র আবার ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করলেও পর্যটনশিল্পে সে জোয়ার আসেনি। ফলে লোকসানে চলছে জোসেফের ব্যবসা। ব্যবসায় মার খেয়ে একের পর এক ১০টি লাক্সারি বাস বেচে দিতে বাধ্য হয়েছেন জোসেফ। তবে তাতেও সুরাহা হয়নি। এ বার আরও কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জোসেফ।।সম্প্রতি নেটমাধ্যমে ‘কন্ট্র্যাক্ট ক্যারেজ অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশন কেরালা’ (সিসিওএ)-নামে একটি সংগঠন জোসেফের হয়ে বিজ্ঞাপন দিয়েছে। তাতে ফুটে উঠেছে জোসেফের দুর্দশার কাহিনি। ১০টি লাক্সারি বাস বিক্রি করার জন্য জোসেফের আর্তিতে সাড়া দিয়েছিলেন ওই সংগঠনের কর্তৃপক্ষ। ফেসবুকে তাঁরা জোসেফের হয়ে বিজ্ঞাপন দিয়েছেন, ‘ট্যুরিস্ট বাস বিক্রি রয়েছে প্রতি কেজি ৪৫ টাকা।’ বিজ্ঞাপনটি প্রকাশিত হওয়ার পরেই নেটমাধ্যমে শোরগোল পড়েছে। তবে জোসেফ নির্বিকার। তিনি জানিয়েছেন, অতিমারীর ধাক্কায় ব্যবসায় যথেষ্ট মার খেয়েছেন। তার চোট আর সামলাতে পারছেন না। সংবাদমাধ্যমেও জোসেফ বলেছেন, “আমি আর এই ব্যবসা চালাতে পারছি না।”
অতিমারীর প্রকোপে কী দুর্দশার মধ্যে রয়েছেন, তা-ও জানিয়েছেন জোসেফ। তাঁর কথায়, “ব্যবসা বাঁচাতে আগেই ২০টার মধ্যে ১০টা লাক্সারি বাস বিক্রি করে দিয়েছিলাম। এ বার বাকিগুলোও জলের দরে বিক্রি করতে চাই।” এই সিদ্ধান্তের পিছনে কারণও জানিয়েছেন জোসেফ। তিনি বলেন, “লাক্সারি বাসের ব্যবসার আয় থেকেই আমার সংসার চলে। তবে ব্যবসা মার খাওয়ায় পরিবারের পাশাপাশি আমার সংস্থার কর্মীরাও বিপাকে পড়েছেন।” অতিমারীর সময় ব্যবসা বাঁচাতে প্রাণপাত করলেও আয়-ব্যয়ের হিসাব মেলাতে পারেননি জোসেফ। ওই সময়ে পুলিশি হেনস্থারও শিকার হয়েছেন বলে দাবি তাঁর। এমনকি, মোটর ভেহিক্যালস দফতরের জন্যও তাঁর হয়রানি হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন জোসেফ। জোসেফের দাবি, যথাযথ ভাবে কোভিডবিধি মান্য করা হচ্ছে কি না, তার উপর নজরদারির নামে অযথা তাঁকে হয়রান করেছে পুলিশ। সামান্য বেগতিক দেখলেই মোটা টাকা জরিমানা দিয়ে হয়েছে তাঁকে। জোসেফের কথায়, “প্রতিটি লাক্সারি বাসের জন্য প্রায় ৪০ হাজার টাকা করে কর দিতে হয়। তার উপর রয়েছে জ্বালানির খরচ। সঙ্গে ৮০ হাজার টাকা করে বিমার প্রিমিয়াম। তবে কোভিডবিধি অমান্য করার অভিযোগ করে ট্রিপের মাঝে বহু বার বাস বসিয়ে দিতেন পুলিশ বা মোটর ভেহিক্যালস ডিপার্টমেন্টের আধিকারিকেরা।”