রীতিমতো উপচে পড়ল ভিড়। শনিবার ঘড়ির কাঁটায় তখন সময় ঠিক সন্ধ্যা ছ’টা। সল্টলেকের সেন্ট্রাল পার্ক তথা বইমেলা প্রাঙ্গণে জনজোয়ার। নানান প্রকাশনীর স্টলের ভিতরে গিজগিজ করছে মানুষ। স্টলের বাইরেও লাইন। তা সামলাতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন নিরাপত্তারক্ষীরা। ভিড় ঠেলে এক স্টল থেকে আরেক স্টলে যেতে অনেকটা সময় লাগছে। তাও উৎসাহিত বইপ্রেমীদের ঢল বাড়তে থাকল ক্রমেই। মেলার ভিড় যতই বাড়ল, রাস্তার ট্রাফিক সামলাতে ততটাই কালঘাম ছুটল বিধাননগর পুলিসের পদস্থ আধিকারিক থেকে সিভিক ভলান্টিয়ারদের।
প্রসঙ্গত, কোভিড কারণে গত বছর মেলা হয়নি। তাই বুঝি শহরবাসী এবার জমিয়ে উপভোগ করছেন বইমেলা। শুধু ভিড় নয়, উল্লেখযোগ্যভাবে ২০২০ সালের মেলায় বই কেনার প্রবণতাকে টেক্কা দিচ্ছে এবারে মানুষের আগ্রহ। গিল্ডের পক্ষ থেকে এদিন সাংবাদিক বৈঠকে সেকথা জানান সম্পাদক ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায় ও সভাপতি সুধাংশুশেখর দে। সুধাংশুবাবু জানিয়েছেন, সেবার প্রথম পাঁচদিনে আড়াই কোটি টাকার বই বিক্রি হয়েছিল। গিল্ডের হিসেব বলছে, চলতি মেলায় ইতিমধ্যেই প্রায় পাঁচ কোটি টাকার বই বিক্রি হয়ে গিয়েছে। এটা একটা রেকর্ড। প্রসঙ্গত, গত বছরের মেলায় মোট ২৪ কোটি টাকার ব্যবসা হয়েছিল। এবার সেই মাইল স্টোন অতিক্রম করে যাবে বলেই আশা গিল্ডের। বিধাননগর পুলিশ সূত্রে খবর, শিবরাত্রির দিন ছুটি থাকায় প্রায় ১ লক্ষ মানুষ ভিড় জমিয়েছিলেন মেলা প্রাঙ্গণে। এদিনও আপাতদৃষ্টিতে মনে হয়েছে লক্ষাধিক মানুষের কাছে ‘উইকএন্ড হ্যাং-আউট প্লেস’ হয়ে উঠেছে কলকাতা বইমেলা।
উল্লেখ্য, বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন সেন্ট্রাল পার্কের নাম হবে ‘বইমেলা প্রাঙ্গণ’। সেই ঘোষণায় সরকারিভাবে সিলমোহর দিলেন পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। সেই নির্দেশিকা এদিন আনুষ্ঠানিকভাবে জনসমক্ষে নিয়ে আসে গিল্ড। গিল্ডের পদাধিকারীরা জানান, এতদিন বইমেলার স্থায়ী কোনও আস্তানা ছিল না। তা মুখ্যমন্ত্রীকে জানানোর ফলে তিনি স্থায়ী ব্যবস্থা করে দিলেন। এতে গিল্ড এবং সাধারণ মানুষ দুই-ই উপকৃত হবেন বলে জানান সম্পাদক। তিনি বলেন, মিলন মেলার তুলনায় সল্টলেকের সেন্ট্রাল পার্কে বই বিক্রির সংখ্যা অনেকটাই বেশি। এখানে অনেক বেশি মানুষ ভিড় জমান। অন্যদিকে, এবারই প্রথম ভার্চুয়াল মাধ্যমে সম্প্রচারিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলা। সেখানেও ভালোই প্রতিক্রিয়া পাওয়া যাচ্ছে বলে গিল্ড সূত্রে খবর। সম্পাদক বলেন, দেশ-বিদেশের বহু মানুষ দেখছেন। পরিসংখ্যান বলছে, ফেসবুক, ইউটিউব মিলিয়ে মোট ৩০ লক্ষ মানুষ দেখেছেন বইমেলার ভার্চুয়াল সংস্করণ।