নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ১২৫ তম জন্মবর্ষে দীর্ঘ বইমেলা জুড়েই তাঁর ছায়া। কিন্তু এবার বিশ্ব হিন্দু পরিষদের স্টলের গায়ে সঙ্ঘ পরিবারের অন্যতম প্রাণপুরুষ গোলওয়ালকর, হেডগেওয়ারের পাশেই দেখা গেল নেতাজির ছবি! সুভাষের অন্য পাশে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। মঙ্গলবার কলকাতা বইমেলা শুরুর আগে ওই ছবি দেখে সাধারণ ইতিহাস-সচেতন পাঠকেরা অনেকেই ক্ষুব্ধ। বিষয়টি শুনে ইতিহাসবিদ তনিকা সরকার বলছেন, ‘সুভাষচন্দ্র আদ্যোপান্ত সেকুলার ছিলেন। তাঁর জীবনের কোনও বড় কাজেই সাম্প্রদায়িকতার গন্ধ নেই। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ বা বিশ্ব হিন্দু পরিষদের মতাদর্শের ধারকদের পাশে সুভাষের ছবি রাখা তাঁর পক্ষে অপমানজনক।’
আর এক প্রবীণ ইতিহাসবিদ রজতকান্ত রায়ও বলছেন, ‘সুভাষ এবং ভিএইচপি, আরএসএসের আদর্শে আকাশ-পাতাল ফারাক। কংগ্রেসের সভাপতি হওয়ার সময়েও সুভাষচন্দ্র সর্বধর্ম সমন্বয়, সম্প্রীতি ও সমাজতন্ত্রের প্রতি একনিষ্ঠ ছিলেন। তৎকালীন হিন্দু মহাসভার সঙ্গে তাঁর আদর্শগত বিরোধও সুবিদিত।’ তাঁর মতে, আজ়াদ হিন্দ ফৌজের সর্বাধিনায়ক সুভাষের ঝাঁসি রানি বাহিনীও নারী স্বাধীনতার প্রতীক। তাঁর প্রশ্ন, মেয়েদের এই মর্যাদাই বা সঙ্ঘের আদর্শে কোথায়? সুভাষের ভ্রাতুষ্পুত্র তথা ইতিহাসবিদ সুগত বসু বলছেন, ‘এভাবে সুভাষকে আত্মসাৎ করা যায় না। দেশের মানুষ জানেন, তাঁর মতাদর্শ হিন্দুত্ববাদীদের বিপরীত মেরুতে। তা ছাড়া, দেশের ঐক্য সাধনার কাজে একমাত্র গান্ধীর পাশেই সুভাষের ছবি মানায়।’
অধিকাংশ ইতিহাসবিদই মনে করেন, দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের মধ্যে সঙ্ঘঘনিষ্ঠ বা হিন্দুত্ববাদী কার্যত কেউ ছিলেন না। তাই বাধ্য হয়েই আম্বেদকর বা সুভাষের মতো জাতীয় নায়কদের তারা ‘আত্মসাৎ’ করতে চাইছে। দীর্ঘ দিন ভিএইচপি, সঙ্ঘ পরিবারের কর্মকাণ্ড খুব কাছ থেকে দেখে গবেষণা করা তনিকা বলছেন, ‘বড়সড় গালভরা আদর্শের কথা মুখে বললেই হল না! বাবরি ধ্বংস, গুজরাত গণহত্যা থেকে গোরক্ষার নামে মানুষ হত্যায় ভিএইচপি-র ভূমিকাই বলে দিচ্ছে, তাদের অবস্থানটা আসলে কী। সুভাষচন্দ্রের নাম মুখে আনার যোগ্যতাও ওদের নেই।’