যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনে আটকে পড়েছেন পশ্চিম মেদিনীপুরের সবংয়ের বাসিন্দা সুশোভন বেরা। কিছুদিনের মধ্যেই দেশে ফিরতেন তিনি, ফ্লাইটের টিকিটও কাটা হয়ে গেছিল। কিন্তু সে সব ক্যানসেল করে এখন বাড়ি ছেড়ে বাঙ্কারে আশ্রয় নিতে হয়েছে সুশোভনকে। এদিকে দেশের বাড়িতে আতঙ্কে ঘুম উড়েছে বাবা নারায়ণচন্দ্র বেরা ও মা নিভারানী বেরার।
তাঁদের একমাত্র ছেলে সুশোভন, ২০১৯ সালে ইউক্রেনে ডাক্তারি পড়তে গেছিলেন। এম বিবি এস থার্ড ইয়ার এখন তাঁর। তার মধ্যেই এমন যুদ্ধের দামামা বেজে উঠবে কে জানত! বিদেশ বিভুঁইয়ে ছেলে যাতে সুস্থ থাকে, এই যন্ত্রণা, আতঙ্কের অবসান হয় দ্রুত, মেদিনীপুরের বাড়িতে বসে সেই প্রার্থনাই করে চলেন অসহায় বাবা মা।
যদিও আজ সকাল সাতটাতেও ছেলের সঙ্গে কথা হয়েছে। কিন্তু বেশিরভাগ সময়েই তো নেটওয়ার্ক পাওয়া যাচ্ছে না, তাই আশঙ্কায় বাবা-মা। ভারত সরকারের কাছে তাঁদের আবেদন, ইউক্রেনে পড়াশোনা করতে গিয়ে আটকে পড়া সমস্ত ভারতীয় ছেলেমেয়েদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হোক।
মুর্শিদাবাদ, শিলিগুড়ি-সহ রাজ্যের একাধিক জেলা থেকে ইউক্রেনে আটকে থাকার খবর আসছে। যদিও সঠিক কতজন তা জানা যায়নি। আটকে থাকা ভারতীয়দের পরিবার উৎকণ্ঠার মধ্যে দিয়ে সময় কাটাচ্ছেন।
গতকাল থেকেই বিমান পথ বন্ধ। কীভাবে তাঁদের দেশে ফেরানো হবে? সেই নিয়ে একের পর এক উচ্চ পর্যায়ের আলোচনা চলছে। বিদেশ মন্ত্রক বিভিন্ন দেশের সঙ্গে কথা বলছে, পথ খুঁজছেন ভারতীয়দের ফেরানোর। গতকালের আগে পর্যন্ত বিমান গিয়ে ইউক্রেন থেকে ভারতীয়দের নিয়ে এসেছে। কিন্তু কাল সকাল থেকে রাশিয়া, অসামরিক বিমান চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করার পর থেকেই উদ্বেগ বেড়েছে।
ইতিমধ্যেই ইউক্রেনে আটকে পড়া বাংলার ছাত্রছাত্রীদের বিষয়ে খোঁজ খবর পাওয়ার জন্য বিশেষ কন্ট্রোল রুম চালু করেছে রাজ্য সরকার। এক সিনিয়র আইএএস অফিসারের নেতৃত্বে ডব্লিউবিসিএস অফিসারদের নিয়ে এই কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব বাঙালিরা আটকে রয়েছেন ইউক্রেনের যুদ্ধ পরিস্থিতিতে, তাঁদের সাহায্য করারও চেষ্টা করা হবে। সকাল ন’টা থেকে রাত ন’টা পর্যন্ত চালু থাকবে পরিষেবা। কন্ট্রোল রুমের নম্বর হল: ২২১৪৩৫২৬, ১০৭০।
তবে ইউক্রেনে কতজন আটকে আছেন, এ নিয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও সুস্পষ্ট ধারণা নেই নবান্নের কাছে। তাই অবিলম্বে সমস্ত তথ্য জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে নবান্ন। যত দ্রুত সম্ভব নিজের নিজের জেলায় কতজন ইউক্রেনে আটকে আছে সেই তথ্য জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জেলা শাসকদের।