কোভিডকালে মানুষের আয় কমেছে। অনেকেই চাকরি হারিয়েছেন। মারণ ভাইরাসের সেই প্রকোপ কমলেও অর্থনীতি তাঁর স্বাভাবিক ছন্দ হারিয়ে ফেলেছে। কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন মোদী সরকারকে তাই দেশের বহু আর্থিক বিশেষজ্ঞরা বার বার জানিয়েছেন মানুষের হাতে সরাসরি টাকা তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করুন। কিন্তু সেই কথায় যেমন বিন্দুমাত্র কর্ণপাত করেনি ৫৬ ইঞ্চির ছাতির সরকার তেমনি তাঁরা এটাও মানতে নারাজ যে দেশের অর্থনীতি এখনও ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি।
বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য এই কোভিডকালেই রাজ্যের মানুষের ঝাতে টাকা তুলে দেওয়ার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন। তিনিও বার বার মোদী সরকারকে অনুরোধ করেছেন মানুষের হাতে সরাসরি টাকা তুলে দিতে। বৃহস্পতিবার নাম না করেই তিনি কার্যত আরও একবার সেই বার্তা দিলেন বলে এখন অনেক্কেই মনে করছেন। এদিন কলকাতার নেতাজী ইন্ডোর স্টেডিয়াম থেকে তিনি পড়ুয়াদের ঋণ দান করার জন্য ব্যাঙ্কগুলিকে আরও এগিয়ে আসার অনুরোধ করেন। আর তখনই তিনি সরাসরি মানুষের হাতে আরও বেশি করে টাকা তুলে দেওয়ার কথা বলেন। মনে করা হচ্ছে তিনি শুধু ব্যাঙ্কগুলিকে নয়, পরোক্ষে মোদী সরকারকেও বার্তা দিয়েছেন।
এদিন নেতাজী ইন্ডোর স্টেডিয়ামে স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড প্রদান কর্মসূচীর সূচনার অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ব্যাঙ্কগুলি কিন্তু এখনও এই ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা নিচ্ছে না। ভুলে যাবেন না স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে আপনারা যে টাকা ঋণ দিচ্ছে তার গ্যারেন্টার রাজ্য সরকার। তাই আপনাদের টাকা মার যাবে না। ব্যাঙ্কের টাকা তো মানুষের টাকা। সেই টাকা যত বেশি করে মানুষের হাতে তুলে দেবেন তাতে অর্থনীতি তত ভালো হবে। টাকা ঘরে রেখে কোনও লাভ নেই। অর্থনীতি তখনই পুষ্ট হয় যখন মানুষের হাতে টাকা থাকে। ব্যাঙ্কগুলির বিরুদ্ধে কিন্তু আমার কাছে অভিযোগ আসছে পড়ুয়াদের ঋণ দেওয়া হচ্ছে না। আমাদের আর্জি আপনারা আরও বেশি করে এগিয়ে আসুন।’ উল্লেখ্য, রাজ্য সরকারের স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ডের জন্য এখনও পর্যন্ত ১ লক্ষ ২৫ হাজার পড়ুয়া আবেদন করেছে। যার মধ্যে ৫০ শতাংশ ছাত্রছাত্রীকেই ঋণ দিচ্ছে রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে রাজ্যের মুখ্যসচিব হরেকৃষ্ণ দ্বিবেদী ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া, ব্যাঙ্ক অফ বরোদা ও কানাড়া ব্যাঙ্কের আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। তারপরেই এই ৩টি নতুন ব্যাঙ্ক পড়ুয়াদের ঋণ দিতে রাজি হয়েছে। যদিও এখনও পর্যন্ত মোট ১০টি ব্যাঙ্ক পড়ুয়াদের এই কর্মসূচীর মাধ্যমে ঋণ দিতে রাজি হয়েছে।
এখনও পর্যন্ত যে ১ লক্ষ ২৫ হাজার ছাত্রছাত্রী ঋণের জন্য আবেদন করেছে, তার মধ্যে ১৪ হাজার পড়ুয়া ক্রেডিট কার্ড পেয়ে গিয়েছে। আরও ১৪ হাজার পড়ুয়ারও ১০০ শতাংশ নথিপত্র তৈরি আছে। তারাও খুব শিগগিরই কার্ড পেয়ে যাবে। তাদের টাকা অনুমোদন হয়ে গিয়েছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষাসচিব মণীশ জৈন। আরও ১০ হাজার জনের আবেদন প্রভিশনাল অ্যাপ্রুভাল পেয়েছে। ২২ হাজার ৫০০ জনের আবেদনও গ্রাহ্য করা হয়েছে। তবে ৯ হাজার পড়ুয়ার আবেদনের কোনও সারবত্তা নেই। আর ৫ হাজার ছাত্রছাত্রী যারা বাইরের রাজ্যে পড়াশোনা করে, তাদের কলেজ কর্তৃপক্ষের থেকে কোনও উত্তর পাওয়া যায়নি। ফলে তাদের ঋণ দিতে পারছে না সরকার।