বাংলার রাজ্যপাল হয়ে আসার পর থেকেই বারবার রাজ্যের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়েছেন জগদীপ ধনকর। প্রায় প্রতিদিনই পালা করে রাজ্য সরকারকে উত্ত্যক্ত করতে দেখা যায় তাঁকে। যে কারণে কিছুদিন আগেই রাজ্যপালকে টুইটারে ব্লক করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এমনকী নবান্ন-রাজভবন সংঘাত এমন পর্যায়ে চলে গিয়েছে যে, রাজ্যপালের অপসারণের দাবিতে সংসদেও সরব হয়েছে বাংলার শাসক দল। এবার রাজ্যপালের সঙ্গে বিবাদ বাঁধল আরেক বিরোধী শাসিত রাজ্য ঝাড়খণ্ডের সরকারের। অভিযোগের চরিত্র যদিও আলাদা, তবে লড়াইয়ের ধরন এক।
অন্যত্র রাজ্য সরকারগুলি রাজ্যপালদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক কাজে হস্তক্ষেপের অভিযোগ করছে। সেখানে ঝাড়খন্ডের রাজ্যপাল রমেশ ব্যাসের অভিযোগ রাজ্য সরকার ঢুকে পড়ছে রাজভবনের এক্তিয়ারে। এই অভিযোগ তুলে তিনি ঝাড়খণ্ড আদিবাসী উপদেষ্টা পর্ষদ নিয়ে ১৩ পাতার নোট পাঠিয়ে রাজ্য সরকারকে সংবিধান মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন। সেই সঙ্গে বলেছেন, পর্ষদ তাঁর অনুমতি ছাড়া কোনও প্রস্তাব কার্যকর করতে পারবে না। ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন গত বছর বিধি বদল করে নিজেই পর্ষদের চেয়ারম্যান হয়েছেন। রাজ্যপাল যে নোট পাঠিয়েছেন, তা পর্ষদে মুখ্যমন্ত্রীর ডানা ছাঁটার সামিল। ফলে পর্ষদের কাজকর্ম থমকে গিয়েছে।
বাংলা ছাড়াও অবিজেপি রাজ্য তামিলনাড়ু, কেরল, মহারাষ্ট্র, ছত্তিশগড় এবং তেলেঙ্গানায় বেশ কিছুদিন ধরেই রাজ্য সরকারের সঙ্গে রাজ্যপালদের বিবাদ চলছে। সেই তালিকায় যুক্ত হল ঝাড়খণ্ড। তবে বাংলার রাজ্যপালের সঙ্গে বাকিদের তুলনা চলে না। সাংবিধানিক লড়াইয়ে তাঁরা কেউ টুইটারের আশ্রয় নেননি। তবে ফাইল আটকে দিয়ে সরকারি কাজে হস্তক্ষেপের অভিযোগ সর্বত্র। কেন্দ্রীয় সরকার অবিজেপি দল শাসিত রাজ্যগুলির সঙ্গে রাজ্যপালদের বিরোধকে প্রশ্রয় দিচ্ছে অভিযোগ তুলে মুখ্যমন্ত্রীদের সম্মেলন ডাকার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বাংলার মমতা বন্দ্যপাধ্যায় এবং তামিলনাড়ুর এমকে স্ট্যালিন।
গত বছর ঝাড়খণ্ডের রাজ্যপালের ভার নেওয়ার আগে ব্যাস ছিলেন ত্রিপুরার রাজ্যপাল। তিনি পুরোদস্তুর রাজনীতির মানুষ। ছত্তিশগড়ে বিজেপির সাতবারের এমপি ব্যাস অটলবিহারী বাজপেয়ির মন্ত্রিসভায় ছিলেন বহু বছর। গত বছর জুলাইয়ে তিনি রাঁচির রাজভবনের বাসিন্দা হওয়ার আগে ঝাড়খণ্ডের রাজ্যপাল ছিলেন দ্রৌপদী মুর্মু। তিনিই প্রথম আদিবাসী উপদেষ্টা পর্ষদের বিষয়ে ফাইল তলব করেন। রাঁচি ছেড়ে যাওয়ার আগে নতুন রাজ্যপালকে সে বিষয়ে অবহিত করে যান। এদিকে মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন গত বছর বিধি বদল করে রাজ্যপালকে সরিয়ে নিজেই পর্ষদের মাথায় বসেন।
কমিটিতে বিরোধী দল বিজেপির কয়েকজন বিধায়ককে রেখেছে রাজ্য সরকার। কিন্তু রাজ্যপালের কোনও ভূমিকা পালনের সুযোগ রাখা হয়নি। এই সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি জারি হতে আগের রাজ্যপাল সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র রাজভবনে তলব করেন। সম্প্রতি ১৩ পাতার নোট পাঠিয়ে বলেন, পর্ষদ গঠিত হয়েছে সংবিধান লঙ্ঘন করে। সংবিধানের পঞ্চম তফসিল অনুযায়ী আদিবাসী কল্যাণের বিষয়ে রাজ্যপালের মতামত ছাড়া রাজ্য সরকার পদক্ষেপ করতে পারে না। ১৩ পাতার নোটে তিনি জানিয়ে দেন, তাঁর অনুমতি ছাড়া পর্ষদ কোনও সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে পারবে না। এছাড়া রাজ্যপালের দু’জন প্রতিনিধিকে পর্ষদের সদস্য করতে হবে।