অবশেষে অপেক্ষায় ইতি। দীর্ঘ ২৭ পর বছর ২৭ বছর পর মিলতে চলেছে বিচার। পুরুলিয়া অস্ত্রবর্ষণ মামলায় মূল অভিযুক্ত ডেনমার্কের নাগরিক নিয়েলস হলক ওরফে কিম ডেভির প্রত্যর্পণ কার্যত চূড়ান্ত। গত কয়েক বছর ধরেই তাঁকে হাতে পেতে জোরদার চেষ্টা চালিয়েছে নয়াদিল্লী। মানা হয়েছে একাধিক শর্ত। তাই অবশেষে কিমকে আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতে ফেরাতে উদ্যোগী খোদ ডেনমার্ক সরকার। নবান্ন সূত্রের খবর, প্রত্যর্পণের আগে এখানকার বিচার কক্ষ ও সংশোধনাগারের হালহকিকত খতিয়ে দেখতে মঙ্গলবার কলকাতায় এসেছে সেদেশের এক প্রতিনিধি দল। আজ, বুধবার তারা নগর দায়রা আদালতের বিচার ভবন পরিদর্শন করবে। সঙ্গে থাকবেন সিবিআই, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এবং রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দপ্তরের আধিকারিকরা। এমনকী ডেনমার্ক সরকারের শর্ত মেনে কিমকে ‘বিচারাধীন বন্দী’ হিসেবে সংশোধনাগারের বাইরে কোথাও রাখা যায় কি না, সেব্যাপারেও এদিন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা। সেক্ষেত্রে হাওড়ার কোনও গ্রামীণ এলাকায় ‘বিশেষ জেল’-এর পৃথক পরিকাঠামো গড়া হতে পারে। তবে ডেনমার্কের প্রতিনিধিদের রিপোর্টের উপরই নির্ভর করছে চূড়ান্ত প্রত্যর্পণ পর্ব।
উল্লেখ্য, বিগত ১৯৯৫ সালের ১৭ই ডিসেম্বর গভীর রাতে লাটভিয়ার একটি ছোট বিমান (অ্যান্টোনভ এএন‑২৬) থেকে পুরুলিয়ার ঝালদার বিভিন্ন প্রান্তে অস্ত্র বর্ষণ করা হয়। গোটা ঘটনার মাস্টারমাইন্ড কিম ডেভি। তাঁর সঙ্গী ছিলেন ব্রিটিশ নাগরিক পিটার ব্লিচ। ৩০০’র বেশি একে ৪৭ রাইফেল এবং ১৬ হাজার রাউন্ডের অধিক গুলি ফেলা হয়েছিল বিমান থেকে। এদেশের আকাশসীমা পেরনোর আগেই বিমানটিকে মাটিতে নামতে বাধ্য করে বায়ুসেনা। গ্রেপ্তার করা হয় পিটার ব্লিচকে। যদিও কিম ভারত সরকারের চোখে ধুলো দিয়ে চম্পট দেন। ১২ বছর পর, ২০০৭ সালে তাঁর হদিশ মেলে ডেনমার্কে। তারপর থেকেই তাঁকে ভারতে ফেরানোর চেষ্টা চলছে। সিবিআই সূত্রে খবর, গত ২০১০ সালের ৯ই এপ্রিল কিমের প্রত্যর্পণে রাজি হয়েছিল ডেনমার্ক সরকার। কিন্তু ভারতের সংশোধনাগারের বেহাল দশার অভিযোগ তুলে আদালতের দ্বারস্থ হন কিম। এমনকী পিটার ব্লিচও ডেনমার্কের উচ্চ আদালতে জানান এখানকার জেলের অব্যবস্থার কাহিনি।রাজি হয় না সেদেশের সরকার। ২০০৭ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত ডেনমার্কের আদালতে টানা আইনি লড়াই চালিয়েছে ভারত। পাশাপাশি চলে দৌত্য। অবশেষে গত বছর এসেছে কূটনৈতিক সাফল্য। সূত্রের খবর, তারই প্রেক্ষিতে কিমকে প্রত্যর্পণে সম্মত হয়েছে ড্যানিশ মুলুক।
