এশিয়ার বৃহত্তম কয়লা প্রকল্প বীরভূমের দেউচা-পাচামির কাজ নিয়ে বিরোধিতা চলছেই। নানা সময়ে বিরোধী দলের একাধিক ব্যক্তিত্ব সেখানে গিয়ে জোর করে জমিদখলের অভিযোগ তুলে প্রকল্পের কাজ বন্ধের ডাক দিয়েছেন। আদিবাসীদের বঞ্চিত করার অভিযোগও উঠেছে। এসব নিয়ে এবার সরাসরি আসরে নামলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার নবান্ন থেকে সাংবাদিক বৈঠকে বিরোধীদের ‘চক্রান্ত’ নিয়ে সরব হলেন তিনি। সাফ জানালেন, ‘ওখানে টাকা নিয়ে কোনও কোনও খাদান মালিক ভুল বোঝাচ্ছেন’। এরপরই তাঁর নির্দেশে মুখ্যসচিব জানান, দেউচা-পাচামি প্রকল্পের পুনর্বাসন প্যাকেজের অঙ্ক বাড়ানো হয়েছে।
এদিন মুখ্যমন্ত্রী জানান, ‘দীর্ঘদিন বাদে রাজ্যে এত বড় একটা কাজ হচ্ছে। লক্ষাধিক চাকরি হবে। এই প্রজেক্টটি কার্যত ৫ রাজ্যের সঙ্গে লড়াই করে আমরা ছিনিয়ে এনেছি। কোনও দখলদারি করছি না। গরিবদের বঞ্চিত করে কিছু করি না। কিছু খাদান মালিক আছে, তারা ভুল বোঝাচ্ছে। টাকা দিয়ে তারা কিছু লোককে কিনে নিচ্ছে। তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থ আছে। জমির দামের চেয়ে দ্বিগুণ দাম দেওয়া হচ্ছে। চাকরি দেওয়া হচ্ছে’। এরপর তিনি জানান, দেউচা-পাচামি কয়লা ব্লক তৈরি হলে আগামী ১০০ বছর বিদ্যুতের কোনও সমস্যা হবে না। তাঁর আশ্বাস, এই প্রকল্পের জন্য যাতে পরিবেশের কোনও ক্ষতি না হয়, সেই দিকেও সতর্ক প্রশাসন।
এরপরই তিনি মুখ্যসচিবকে নির্দেশ দেন, এদিন ক্যাবিনেট বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলি জানাতে। দেউচা-পাচামির প্রকল্পে পুনর্বাসন প্যাকেজ বাড়ানো হয়েছে, সেই ঘোষণা করে মুখ্যসচিব এইচকে দ্বিবেদী জানান, ‘জমির দামের চেয়ে দ্বিগুণ দাম দেওয়া হচ্ছে। যাঁরা জমি দিয়েছেন, তাঁদের প্রথমে ৬০০ স্কোয়ারফিটের উপর বাড়ি তৈরির জন্য টাকা দেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু এখন ঠিক হয়েছে, ৭০০ স্কোয়ারফিট জমির উপর বাড়ি বানানোর টাকা দেব। তাঁরা নিজেরা বাড়ি তৈরি করে নেবেন। এছাড়া আর্থিক সহায়তা মূল্য ৫ লক্ষ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭ লক্ষ টাকা দেওয়া হবে। জমিদাতাদের পরিবারের একজনকে হোমগার্ড, কনস্টেবলের চাকরি দেওয়া হবে। এছাড়া যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ পাবেন সকলে। খাদান মালিকদের জন্যও নির্দিষ্ট প্যাকেজ রয়েছে। আজকের ক্যাবিনেট বৈঠকে সব অনুমোদন দেওয়া হল’।
এ প্রসঙ্গেই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘খাদান মালিকদের প্যাকেজ থাকা সত্ত্বেও তাঁরা সরকারি কাজে বাধা দিচ্ছেন। বেআইনি কিছু খাদান রয়েছে তাঁদের, তা কিছুতেই সরকারের হাতে দিতে চান না তাঁরা। কিন্তু সরকার তা বরদাস্ত করবে না। আর দেউচা-পাচামি নিয়ে যারা ভুল বোঝাচ্ছেন, বিশেষত বিরোধীরা, তাঁরা শুনে রাখুন, আপনারাও দায়ী থাকবেন চাকরিক্ষেত্রে বাধা দেওয়ার জন্য’। এরপর মুখ্যমন্ত্রী আরও জানান, তাঁর লক্ষ্য শিল্পায়ন। রাজ্যে শিল্পবিস্তার হলে গ্রামবাংলার ছেলেমেয়েদের চাকরির অভাব হবে না। এটা তাঁর প্রতিশ্রুতি।