অনন্য নজির গড়ল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। স্বাধীনতার পর এই প্রথম বাংলার অন্তত এক কোটি গরিব ও নিম্নবিত্ত শ্রমিক-কর্মচারীর জন্য মজুরির ক্ষেত্রে রেকর্ড তৈরি করল রাজ্য। গত কয়েক মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম এ রাজ্যে নাকি কম দেখেছে কেন্দ্রীয় শ্রমমন্ত্রক। তার ফলে শ্রমিক-কর্মচারীদের ন্যূনতম মজুরিও সেই অনুযায়ী এবছরের প্রথম ছ’মাসে কিছুটা কমে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু দীর্ঘকালের প্রথা ভেঙে শ্রমিকদের স্বার্থে রাজ্য শ্রমদফতর ন্যূনতম মজুরির চলতি হারই বজায় রাখার সিদ্ধান্ত নিল। এই নজিরবিহীন পদক্ষেপের কারণে এই বিরাট সংখ্যক শ্রমিক-কর্মচারীর রোজগার কমে যাওয়া রদ করা সম্ভব হয়েছে।
পাশাপাশি, দফতর সূত্র অনুযায়ী এপ্রিল-সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শহরে বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম যাচাই করে, লেবার ব্যুরো সম্প্রতি, সর্বশেষ উপভোক্তা মূল্যসূচক (সিপিআই) তৈরি করেছে। তারা বছরে দু’বার এই সূচক তৈরি করে। এপ্রিল-সেপ্টেম্বরের দাম পর্যালোচনার পর ডিসেম্বরের শেষে তারা বছরের দ্বিতীয় সূচক প্রকাশ করে। প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী শ্রমদফতর তারপর রাজ্যের অন্তত ৭৮টি অসংগঠিত ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত এক কোটিরও বেশি শ্রমিক-কর্মচারীর জন্য জানুয়ারি থেকে জুন মাসের মধ্যে প্রযোজ্য ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করে থাকে।
এপ্রসঙ্গে দফতরের আধিকারিকরা জানান, এবার কিছুটা আশ্চর্যজনকভাবে লেবার ব্যুরো সংশ্লিষ্ট মূল্যসূচক কম দেখায়, যা বাস্তবসম্মত নয়। তবে সেই সূচকই তাঁদের মাপকাঠি হওয়ায় নতুন বছরের জানুয়ারি-জুন পর্যন্ত সমস্ত অসংগঠিত ক্ষেত্রের শিল্প শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি কম নির্ধারিত হওয়ার কথা ছিল। স্বাভাবিকভাবে বিষয়টি যথেষ্ট স্পর্শকাতর এবং গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করে এনিয়ে দফতর দ্রুত কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি। শীর্ষ আধিকারিকরা পরিস্থিতি বিবেচনা করে সংশ্লিষ্ট আইনের একটি বিশেষ ধারা প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নেন। সেই অনুসারে মূল্যসূচক হ্রাস পাওয়া সত্ত্বেও চলতি বছরের প্রথম ছ’মাসে অন্তত মজুরি কমছে না। প্রধান সচিব বরুণ রায় এই মর্মে আদেশও বের করেছেন। স্বাধীনতার পর এ এক ব্যতিক্রমী পদক্ষেপ।
অবশ্য শ্রমমন্ত্রকের তরফে জানানো হচ্ছে যে, লেবার ব্যুরো মূল্যসূচক তৈরির জন্য মুখাপেক্ষী থাকে রাজ্যের উপরই। কারণ, তাদের সেই লোকবল নেই। এজন্য রাজ্যজুড়ে বাজার থেকে জিনিসপত্রের দামের তালিকা তৈরি করতে শ্রমদপ্তরের বহু অফিসারকে কাজে লাগানো হয়। এখন সেই তথ্য তৈরিতে কোনও গরমিল থাকলে সূচকেও তার প্রভাব পড়বে। এক্ষেত্রেও সম্ভবত তাই হয়েছে। এদিকে, রাজ্যে সম্প্রতি বন্ধ হয়ে যাওয়া কল-কারখানার শ্রমিকদের জন্যও কিছুটা সুরাহার বন্দোবস্ত করছে শ্রমদফতর। লক আউট বা সাসপেনশন অব ওয়ার্কের নোটিস ঝুলিয়ে দেওয়া প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের নির্দিষ্ট স্কিমে (ফাউলাই) মাসে দেড় হাজার টাকা ভাতা দেওয়ার প্রক্রিয়া চালু রয়েছে। সেই প্রতিষ্ঠান পুনরায় চালু হওয়ার পরও দু’মাস এই ভাতা তাঁরা পাবেন। এমনই সিদ্ধান্ত নিয়েছে শ্রমদফতর।