একুশের ভোটে ভরাডুবির পর থেকেই বঙ্গ-বিজেপির অন্দরে চলছে মুষল পর্ব। সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ, হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ত্যাগ, কলকাতায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরের নেতৃত্বে বৈঠক, বনগাঁয় চড়ুইভাতি, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ, লোকাল ট্রেন থেকে কলকাতার রাজপথে পোস্টার— নানা ভাবে দলের একাংশের বিরুদ্ধে সরব দলেরই অন্য অংশ। যত দিন যাচ্ছে ততই দলে ভারী হচ্ছে বিদ্রোহীরা। এরই মধ্যে উত্তরাখণ্ডে শান্তনু ঠাকুর এবং লকেট চট্টোপাধ্যায়ের বৈঠক ঘিরে ফের গুঞ্জন শুরু হয়েছে গেরুয়া শিবিরে। উত্তরাখণ্ডের বাঙালি অধ্যুষিত এলাকায় ভোটের প্রচারে বাংলায় দলের বিক্ষুব্ধ শিবিরের মুখ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরকেই বেছে নিয়েছেন সেখানকার নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা লকেট চট্টোপাধ্যায়।
উত্তরাখণ্ডের রুদ্রপুর বিধানসভা এলাকায় বাঙালি পল্লিতে শান্তনু ঠাকুরকে নিয়ে প্রচার করিয়েছেন লকেট। এরপরই দলের মধ্যে প্রশ্ন, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে বাদ দিয়ে উত্তরাখণ্ডের বাঙালি অধ্যুষিত এলাকায় ভোটের প্রচারের জন্য শান্তনু ঠাকুরকে কেন আমন্ত্রণ জানালেন লকেট? প্রসঙ্গত, এই মুহুর্তে রাজ্য বিজেপিতে যে বিদ্রোহ চলছে দলের ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সেই বিক্ষুব্ধ শিবিরের নেতৃত্বে রয়েছেন শান্তনু। বঙ্গ বিজেপির অন্দরে জোর চর্চা শুরু হয়েছে, শুভেন্দুও তো বাংলার নেতা। তাঁকে বাদ দিয়ে কেন শান্তনু ঠাকুরকে উত্তরাখণ্ডে ডাকলেন লকেট? যদিও লকেটের ঘনিষ্ঠ মহল সূত্র বলছে, উত্তরাখণ্ডে বহু মতুয়া রয়েছে। মতুয়াদের নেতা হিসেবেই শান্তনু প্রচারে গিয়েছেন। তবে দলের একাংশ কিন্তু শান্তনুকে প্রচারে ডাকার পিছনে নতুন সমীকরণই দেখছে।
এদিকে, গত কয়েকমাস ধরেই বাংলায় একের পর দলীয় কর্মসূচী লকেটহীন। হুগলির সাংসদ মাটি কামড়ে পড়ে উত্তরাখণ্ডে। সেখানে বাংলার এই দাপুটে সাংসদকে বিধানসভা নির্বাচনের দায়িত্ব দিয়েছেন শাহ-নাড্ডা। কিন্তু বাংলা থেকে একেবারেই উধাও কেন তিনি? লকেটের ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রের খবর, যেভাবে রাজ্য বিজেপি চলছে তাতে তিনি হতাশ এবং বিরক্তও বটে। রাজ্যেও লকেটকে যথাযথ কোনও কাজ দেওয়া হয়নি। সম্ভবত সেই কারণেই নিজের মতো করে উত্তরাখণ্ডে দলের কাজ করছেন হুগলির সাংসদ। এর মধ্যেই খবর, উত্তরাখণ্ডের ভোট মিটলেই বঙ্গ বিজেপির বিদ্রোহী নেতারা দেখা করবেন লকেটের সঙ্গে। রাজ্যের পরিস্থিতির কথা তাঁরা বিস্তারিত জানাবেন তাঁকে।
দলীয় সূত্রে খবর, লকেট চট্টোপাধ্যায়ও মনে করেন বঙ্গ বিজেপিতে আদি নেতাদের স্বীকৃতি দরকার। তারা যাতে কোণঠাসা না হন সেটা নিয়েও দিল্লীতে কথা বলতে পারেন তিনি। কারণ, বাংলায় তৎকাল বিজেপি নেতাদের কোনও জনভিত্তি নেই। একেবারেই ব্যক্তিস্বার্থের অঙ্কে তারা বঙ্গ বিজেপির দখল নিতে চাইছে। লকেট বাংলায় দলের পুরনো নেতাদের পক্ষেই রয়েছেন। বিক্ষুব্ধ শিবিরও এমনটাই মনে করছে। জানা গিয়েছে, আগামী সপ্তাহে বিক্ষুব্ধ শিবিরের দুই নেতা দিল্লী যাচ্ছেন। সেখানে লকেট-সহ দলের শীর্ষ নেতৃত্ব ও সাংসদদের সঙ্গে তাদের কথা হতে পারে। ভোটপর্ব মিটলে ১০ মার্চের পর বিজেপির বিদ্রোহ নিয়ে বাংলার নেতাদের সঙ্গে কথা বলবেন কেন্দ্রীয় নেতারা। সেখানে অমিতাভ বিরোধীতা যাতে উঠে আসে তাই দলের সাংসদ-বিধায়কদের তাদের পক্ষে আনতে চাইছে বিক্ষুব্ধরা। দলীয় সূত্রে এমনটাই খবর।