পদ্ম-পরিবারে অব্যাহত গৃহযুদ্ধ। সামনেই পুরনির্বাচন। তার আগেই রাজ্যজুড়ে গোষ্ঠীকোন্দলে জেরবার বঙ্গ বিজেপি। তারই মধ্যে খড়গপুরে দিলীপ-হিরণের দ্বৈরথের জেরে রীতিমতো বীতশ্রদ্ধ হয়ে উঠেছেন গেরুয়া নেতা-কর্মীরা। তাই এই পরিস্থিতিতে ভরসা পেতে তাঁরা শয়ে শয়ে গেরুয়াশিবির ছেড়ে তৃণমূলে যোগদান করছেন। গত বুধবার খড়গপুরের পুরসভার প্রশাসক প্রদীপ সরকারের হাত ধরে ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি বুথ সভাপতি অক্ষয় খাঁড়া সহ একাধিক নেতাকর্মী তৃণমূলে যোগদান করেন। তার কিছুদিন আগে মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের সভাপতি সুজয় হাজরার হাত থেকে দলীয় পতাকা তুলে নেন প্রায় ২০০ জন বিজেপি কর্মী। এই পরিস্থিতিতে তৃণমূল জানিয়েছে, কয়েক হাজার বিজেপি সমর্থক ঘাসফুল শিবিরে যোগদান করার জন্য মুখিয়ে রয়েছেন। কিন্তু দলের মধ্যে আলোচনা করেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বিজেপি ছেড়ে যাঁরা তৃণমূলে চলে আসছেন, তাঁদের বক্তব্য, বিধায়ক ও সাংসদের টানাপোড়েন ক্রমশই বেড়ে চলেছে। দু’জনের যেভাবে কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি চলছে, তাতে দলের মধ্যে কাজ করা ক্রমশ কঠিন হয়ে উঠছে। দলের মধ্যে শান্তি নেই, সম্মান নেই। সব দেখেও বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা হাত গুটিয়ে বসে আছেন। এর থেকে তৃণমূল অনেক ভালো। এ নিয়ে তৃণমূলের জেলা সভাপতি বলেন, “কয়েক বছর পর বাংলায় বিজেপির কোনও অস্তিত্বই থাকবে না।” প্রসঙ্গত, একুশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগদান করেন অভিনেতা হিরণ চট্টোপাধ্যায়। দিলীপবাবুর প্রাক্তন বিধানসভা কেন্দ্র খড়গপুর সদর থেকে প্রার্থী হন হিরণ। কিন্তু নির্বাচনে জেতার পর থেকে ক্রমশই দিলীপবাবুর সঙ্গে দূরত্ব বাড়তে থাকে তাঁর। এরপর চলতি মাসের শুরুতেই সাংসদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকা অসন্তোষ উগরে দিয়ে হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপ ত্যাগ করেন হিরণ।
বিধায়ক-সাংসদের এই দ্বন্দ্বের মাঝেই কয়েকদিন আগে দিলীপ ঘোষকে কটাক্ষ করে হিরণ বলেন, “বঙ্গ বিজেপি যেন অভিভাবকহীন। আগলে রাখতে পারছে না নিজেদের সন্তানদের। শত ঝগড়া অশান্তির মাঝেও একজন অভিভাবক বা বাবা মায়ের কখনও সন্তানের হাত ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়। তাহলে সন্তানরা হয় বিপথে চলে যাবে বা অনাথ হয়ে পড়বে।” হিরণের এই মন্তব্যের পরেই পাল্টা দিলীপ বলেন, “দলের মধ্যে তো অনেকেই রয়েছেন। তাঁদের তো কোনও অভিযোগ নেই। দলের সিস্টেম যাঁরা বুঝতে পারেননি, তাঁদেরই যত সমস্যা!” দিলীপ-হিরণের এই টানাপোড়েনের জেরে পুরভোটের আগেই টালমাটাল অবস্থা গেরুয়াবাহিনীর। সেই সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছে ঘাসফুল শিবির। খড়গপুরের মাটি কামড়ে পড়ে রয়েছেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা। ২০১৫ সালের পুরসভা নির্বাচনে খড়গপুর পুরসভা তৃণমূলের দখল করলেও ৩৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে মাত্র ১১টিতে জিতেছিল তারা। একুশের বিধানসভা ভোটের ফলের নিরিখে খড়্গপুরের ২৪টি ওয়ার্ডে এগিয়ে রয়েছে বিজেপি। রেল শহরের অবাঙালি ভোটকে হাতিয়ার করে আসন্ন পুরসভা নির্বাচনে বিজেপির ভালো ফল করার আশা থাকলেও সাংসদ-বিধায়কের দ্বন্দ্ব মনোবল ভেঙে দিচ্ছে কর্মীদের। ক্রমশই অস্বস্তি বাড়ছে দলের অন্দরে।