হাতে আর বেশি দিন নেই৷ আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে উত্তরপ্রদেশে শুরু হচ্ছে বিধানসভা নির্বাচন। ইতিমধ্যে প্রার্থী তালিকাও ঘোষণাও শুরু হয়ে গিয়েছে। এরই মধ্যে এবার দলের যুব ইস্তেহার প্রকাশ করল কংগ্রেস। প্রতিশ্রুতি দিল রাজ্যের যুব সম্প্রদায়ের সমস্যার সমাধান করার। বিশেষ করে বেকারত্ব দূর করতে যে তারা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, সেকথা পরিষ্কার জানিয়ে দিল কংগ্রেস। শুক্রবার কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী ও কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী দু’জনই উপস্থিত ছিলেন ইস্তেহার প্রকাশের অনুষ্ঠানে। সেখানে রাহুলের ডাক, ‘নতুন ভারতের দিশা দেখানোর কাজ উত্তরপ্রদেশ থেকেই শুরু হোক।’
‘ভারতী বিধান’ নামের ওই ইস্তেহারে দেওয়া হয়েছে ঢালাও প্রতিশ্রুতি। তার মধ্যে অন্যতম ৪০ লক্ষ চাকরির প্রতিশ্রুতি। এর মধ্যে ৮ লক্ষ চাকরি মেয়েদের জন্য সংরক্ষিত। ১ লক্ষ অধ্যাপকের শূন্যপদ পূরণ। সেই সঙ্গে অঙ্গনওয়ারি কর্মীদের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানানো হয়েছে। কেবল চাকরির প্রতিশ্রুতিই নয়, যোগী সরকারকে খোঁচা মেরে রাহুল গান্ধীর দাবি, কীভাবে রোজগারের পথ সৃষ্টি হবে, সেটা দেখাতে চায় কংগ্রেস। কোনও ‘মিথ্যে সংখ্যা’ নয়, যুব সম্প্রদায়ের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের চাহিদামতো চাকরি তৈরি করা হবে। সেই সঙ্গে রাহুল জানান, গত ৫ বছরে রাজ্যে চাকরি হারিয়েছেন ১৬ লক্ষ জন। অথচ প্রতিশ্রুতি ছিল প্রতি বছরে ২ কোটি কর্মসংস্থানের।
একই সুর লক্ষ করা গিয়েছে প্রিয়াঙ্কার কথাতেও। তিনি বলেন, ‘যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও উত্তরপ্রদেশের তরুণরা চাকরি পান না। কেবল ভুয়ো সংখ্যা বলে মানুষকে বোকা বানানো হয়েছে।’ সেই সঙ্গে পরীক্ষা পদ্ধতিতেও ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন তিনি। জানিয়ে দেন, কোনও ভাবেই প্রশ্নপত্র ফাঁসের মতো দুর্নীতি বরদাস্ত করা হবে। সরকারি জায়গা থেকে ফাঁস হলে কঠোরতম সাজারও আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে যোগী সরকার শিক্ষাখাতে বাজেট কমালেও কংগ্রেস তা বাড়াবে বলেও ইস্তাহারে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, মনে করিয়ে দিয়েছেন প্রিয়াঙ্কা। কংগ্রেসের আরও প্রতিশ্রুতি, তারা ক্ষমতায় এলে প্রতিযোগিতামূক পরীক্ষার ক্ষেত্রে কোনও রকম ফি নেওয়া হবে না। বরং বাস-ট্রেনে পরীক্ষার্থীদের কোনও ভাড়াও দিতে হবে না।
শুধু তাই নয়, পরীক্ষার তারিখ ঘোষণার সময়ই জানিয়ে দেওয়া হবে ফলাফল প্রকাশ কিংবা ইন্টারভিউয়ের তারিখও। জানিয়ে দেওয়া হবে কবো নিয়োগ হবে সেটাও। এবং তা মানা না হলে দেওয়া হবে কড়া শাস্তি। এবং এই পুরো প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনতে তৈরি হবে জব ক্যালেন্ডার। প্রাথমিকে দেড় লক্ষ, মাধ্যমিকে ৩৮ হাজার, উচ্চমাধ্যমিকে ৮ হাজার, ডাক্তারিতে ৬ হাজার, পুলিশে ১ লক্ষ, অঙ্গনওয়াড়িতে ২০ হাজার, ২৭ হাজার সহকারীর শূন্যপদ রয়েছে বলে জানানও হয়েছে। সেই সঙ্গে সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয়ে ২ হাজার ও উর্দু শিক্ষকদের ক্ষেত্রে ৪ হাজার শূন্যপদের কথাও মনে করিয়ে কংগ্রেসের প্রতিশ্রুতি, তাঁরা ক্ষমতায় এলে এই সব শূন্যপদ পূরণ করা হবে বলেও।
লাইব্রেরি, ফ্রি ওয়াইফাই, মেস, হোস্টেল— সবক্ষেত্রেই পরিকাঠামো আরও উন্নত করবে বলেও আশ্বাস দিয়েছে কংগ্রেস। এছাড়া বিভিন্ন সংরক্ষণের ক্ষেত্রে বৃত্তি, সাফাইকর্মীদের বিশেষ প্রশিক্ষণের কথাও জানানো হয়েছে। উত্তরপ্রদেশের তরুণ সম্প্রদায়ের মধ্যে নেশায় জড়িয়ে পড়ার প্রবণতাও যে বাড়ছে সেকথা মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে ইস্তেহারে। লখনউয়ে কেন্দ্র তৈরি করে নেশাগ্রস্তদের কাউন্সেলিং করে যুব সম্প্রদায়কে নেশার ফাঁদ থেকে বের করে আনার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে কংগ্রেস। সেই সঙ্গে খেলাধুলোর জন্যও রয়েছে বহু প্রতিশ্রুতি। যার মধ্যে রয়েছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অ্যাকাডেমি কিংবা স্থানীয় ক্রীড়ার ক্ষেত্রের বিশেষ জোনাল অ্যাকাডেমি গড়ার আশ্বাস।