আর আলোচনা নয়, এবার অ্যাকশনে নামতে হবে। বিজেপি বিরোধী জোটের বৈঠকে এভাবেই গলা তুললেন, দিলেন একগুচ্ছ প্রস্তাব। আর বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রস্তাবেই সম্মতি দিল ২১ টি বিজেপি বিরোধী দল।
এই বৈঠক চলাকালীনই আরবিআই গভর্নর উর্জিত প্যাটেলের ইস্তফার খবর আসে। দ্রুত রাজনৈতিক বিষয়ভিত্তিক আলোচনা সেদিকে মোড় নেয়। দেশে ‘স্বতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠানগুলিতে অচলাবস্থার কথা জানিয়ে তিনিই বিরোধীদের পরামর্শ দেন, দু-একদিনের মধ্যে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করে স্মারকলিপি দেওয়া হোক। পাশাপাশি এদিনের বৈঠককে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে আজও সংসদ ভবনে বৈঠকে বসার কথা বলেন বিরোধী নেতাদের। মুখ্যমন্ত্রীর দুটি পরামর্শই মেনে নেন সোনিয়া-রাহুল-সহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতা-নেত্রীরা।
আগাগোড়া বৈঠকের চালিকাশক্তি ছিলেন মমতাই। দিল্লীর মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে সঙ্গে নিয়ে মমতা বৈঠকে যোগ দিতে বিকেল ৪ টে নাগাদ অ্যানেক্স ভবনে আসেন। চিত্র সাংবাদিক এবং টিভি ক্যামেরার আবদার মেনে একটু দাঁড়িয়ে হাসিমুখে হাতজোড় করেন। তারপর কেজরিওয়ালকে নিয়ে চলে যান ভেতরে। শুরু থেকেই মমতা বৈঠকের রাশ তুলে নেন নিজের হাতে।
জানা গেছে, এদিনের বৈঠকে ৩ টি প্রস্তাব দেন মমতা। বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর প্রথম প্রস্তাব, উর্জিত প্যাটেলের ইস্তফার পর কালক্ষেপ না করে রাষ্ট্রপতির কাছে মিছিল করে যাওয়া উচিৎ। সেই মিছিল করবেন বিরোধী দলের নেতা ও মুখ্যমন্ত্রীরা। সংসদীয় দলের নেতারা নন।
বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর দ্বিতীয় প্রস্তাব, দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচী নিতে হবে। উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব, পশ্চিম, উত্ত্র-পূর্ব সর্বত্র বিরোধীদের ঐক্যবদ্ধ ভাবে রাজনৈতিক সভা করতে হবে, বিক্ষোভ দেখাতে হবে।
বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর তৃতীয় প্রস্তাব, সব বিরোধী দল মিলে একটাই ইস্তেহার সামনে রেখে লোকসভা ভোটে যাক। তাতে জনগণ বুঝতে পারবেন, বিরোধী দলের সরকার এলে কোন কাজটাকে তারা অগ্রাধিকার দেবে এবং কী প্রতিশ্রুতি পালন করবে।
জানা গেছে, তাঁর দেওয়া প্রস্তাবে সায় দিয়েছেন বাকি রাজনৈতিক দলগুলি। তবে বৈঠকে পুরো সময় থাকতে পারেননি মমতা। নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে পূর্ব নির্ধারিত বৈঠক থাকায় বিরোধী জোটের বৈঠক শেষ হওয়ার কিছু আগেই বেরিয়ে যান মমতা।
এই বৈঠকে মমতার ভূমিকা থেকে স্পষ্ট, তাঁর এতদিনের অভিজ্ঞতা, লড়াকু মনোভাব, রাস্তায় নেমে আন্দোলন, প্রতিবাদী মনোভাব এবার অন্যদের মধ্যেও সঞ্চারিত করতে চাইছেন তিনি। একসময় সোনিয়া তাঁকে দেখে বলেছিলেন, ‘তোমায় দেখে শিখছি, নাছোড় লড়াই কেমন করে করতে হয়’। এবার এই নাছোড় লড়াইয়ের মানসিকতাই বিরোধী দলের নেতাদের মধ্যেও ছড়িয়ে দিতে চাইছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।