ঘড়ির কাঁটায় তখন প্রায় বিকেল ৫টা। আচমকাই ময়নাগুড়ির দোমোহনি এলাকায় লাইনচ্যুত হয়ে গেল ১৫৬৩৩ আপ বিকানের-গুয়াহাটি এক্সপ্রেসের কামরা। নিমেষের মধ্যেই ঘটে গেল বড়সর দুর্ঘটনা। ট্রেনের কামরাগুলি ছিটকে পড়ার বিকট শব্দ শুনেই ছুটে এসেছিলেন স্থানীয়রা। তাঁরা এসে দেখলেন, ট্রেনটির একটি কামরা ওপরে উঠে সামনের কামরার সঙ্গে মিশে গিয়েছে। পিছনের কামরার লোহার দেওয়াল কেউ যেন টেনে ছিঁড়ে দিয়েছে। দেখে যেন মনে হচ্ছে, কামরাটি লোহার নয়, কাগজ বা থার্মোকলের তৈরি।
এরপরই ঘটনাস্থলে আসে পুলিশবাহিনী। দুই কামরার লোহার দেওয়াল তুবড়ে যেখানে মিশেছে, সেই সংযোগস্থলের ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে রয়েছে ছাই রঙের একটি জিন্স। হাঁটুতে একটি বেগুনি রঙের স্কার্ফ বাঁধা। পায়ের আঙুল দিয়ে সমানে ঝরছে রক্ত। চোখে পড়তেই তড়িঘড়ি সেই ক্ষতস্থানে সাদা কাপড় বেঁধে দেন এক পুলিশকর্মী। তবে তাঁর শরীরের বাকি অংশ দেখা যাচ্ছে না। এরপরই ওই যাত্রীকে উদ্ধার করতে ঝালাই করার যন্ত্র দিয়ে পিছন দিক থেকে কাটা শুরু হয় কামরার দেওয়াল। ঘণ্টাদেড়েক পরে চেপ্টে যাওয়া অংশের ব্যবধান আরও একটু বাড়লে যুবকের হাত দেখা যায়। শোনা যায় তাঁর কথাও। হাত দেখিয়ে যুবকটি বলতে থাকেন, ‘পা কাটবেন না, দোহাই। একটু জল দিন।’ এরপর কেটে যায় আরও একটি ঘণ্টা। যুবককে যখন বার করা হয়, তখন তিনি অজ্ঞান। তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালে।
উল্লেখ্য, গতকাল দুর্ঘটনা যখন হয়, তখনই দিনের আলো কমে এসেছিল। কিন্তু আশেপাশের বাসিন্দারা পৌঁছতে পৌঁছতে অন্ধকার নেমে আসে। এদিকে, দুর্ঘটনার পরে রেলের কামরার ভিতরের আলোও নিভে যায়। অন্ধকারের বুক চিরে ভেসে আসতে থাকে আর্তনাদ। এরই মধ্যে শোনা যায় ‘আল্লা, আল্লা’ আর্তনাদ। জমির আলে বসে তখন কাঁদছিলেন রুকিয়া খাতুন। কাঁদতে কাঁদতে মাটিতে নুয়ে পড়ছিল তাঁর শরীর। তিনি বলতে থাকেন, ‘আমার মেয়েটাকে বার করে আনো কেউ।’ কোন কামরায় মেয়ে আছে? কিছুই বলতে পারছিলেন না তিনি। শুধু একটাই কথা, ‘মেয়েটাকে বার করে আনো।’ এরপরই যদিও একাধিক উদ্ধারকারী দল দ্রুত নেমে পড়েছিল কাজে। সিভিল ডিফেন্স, বিএসএফ থেকে রেলের নিজস্ব বাহিনী, একাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।