রাজ্যে বহুদিন থেকেই সংকটের মুখে পাটশিল্প। কাঁচাপাটের অভাবেই এই সমস্যার উৎপত্তি। রাজ্য সরকার নানাভাবে চেষ্টা চালাচ্ছে এই সংকট দূর করার। পাশাপাশি এই পরিস্থিতিতে চটকল শ্রমিকদের মজুরি সহ কাজের পরিবেশের উন্নতির ব্যাপারেও সক্রিয় হয়েছে তারা। এজন্য একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত করল রাজ্য শ্রমদফতর। সম্প্রতি শ্রমমন্ত্রী বেচারাম মান্নার উদ্যোগে তৈরি এই কমিটিতে মতামত গ্রহণের জন্য বিরোধীদেরও যথেষ্ট প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। ১১ জনের কমিটিতে ঠাঁই পেয়েছেন পাঁচটি বিরোধী ট্রেড ইউনিয়নের প্রতিনিধি। মন্ত্রীর কথায়, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে আমরা রাজ্যের শ্রমিককুলের মজুরি বা অন্যান্য সুবিধা বাড়ানোর ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য সবার মতামত নিয়েই চলতে চাই। এক্ষেত্রে কোনও রাজনৈতিক সঙ্কীর্ণতা আমরা রাখতে চাই না। প্রসঙ্গত, রাজ্যে প্রায় আড়াই লক্ষ শ্রমিক এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে।
প্রসঙ্গত, শ্রম কমিশনার জাভেদ আখতারের জারি করা নির্দেশিকা অনুযায়ী, ১১ সদস্যের এই কমিটির সদস্য-আহ্বায়ক হবেন অতিরিক্ত শ্রম কমিশনার তীর্থঙ্কর সেনগুপ্ত। এছাড়া সিটু, এআইটিইউসি, আইএনটিইউসি, এআইইউটিইউসি এবং বিএমএসের মতো পাঁচটি কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নের শীর্ষস্থানীয় পাঁচ নেতাকে কমিটিতে নেওয়া হয়েছে। শাসক দলের সংগঠন আইএনটিটিইউসি’র একজন প্রতিনিধি রয়েছেন কমিটিতে। এছাড়া চটকল মালিকদের তরফে তিনজন কর্তাকেও রাখা হয়েছে কমিটিতে। শিল্পদফতরের একজন আধিকারিকও থাকবেন সরকারের তরফে। দফতর সূত্রের খবর, আগামী সপ্তাহে কমিটির প্রথম বৈঠক ডাকা হতে পারে। কমিটি মূলত শ্রমিকদের নয়া মজুরি কাঠামো নিয়ে আলোচনা করবে। পাশাপাশি শ্রমিকদের বিভাগীয় বিন্যাস, কর্মস্থলে স্বাস্থ্য ও অন্যান্য সামাজিক সুরক্ষা সংক্রান্ত পরিবেশের উন্নতি নিয়েও তারা চর্চা করে সরকারের কাছে সুপারিশ করবে। পরে তা নিয়ে ত্রিপাক্ষিক চুক্তি করে গোটা শিল্পের জন্য বলবৎ করবে দফতর।
উল্লেখ্য, কাঁচাপাটের সংকট নিয়ে চটকল মালিকদের সংগঠন আইজেএমএ এবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হস্তক্ষেপ চেয়ে চিঠি দিয়েছে। একই চিঠি তারা দিয়েছে কেন্দ্রীয় বস্ত্রমন্ত্রী পীযূষ গোয়েলকেও। চিঠি দিয়ে এর আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দ্বারস্থ হয়েছে আইজেএমএ। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের কাছে তাদের মূল বক্তব্য, বস্ত্রমন্ত্রকের অধীনস্থ জুট কমিশনার সর্বোচ্চ মূল্য কুইন্টাল প্রতি ৬৫০০ টাকায় বেঁধে দেওয়ার পর গত তিন মাস ধরে পাটের জোগান কার্যত শূন্য হয়ে গিয়েছে। গ্রামাঞ্চলে একশ্রেণীর অসাধু ফড়ে বাড়তি মুনাফার আশায় এই সংকট তৈরি করে রেখেছে। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের কয়েকটি চটকল পাটের অভাবে ঝাঁপ বন্ধ করেছে। শীঘ্রই আরও অনেক চটকল একই পথে যেতে বাধ্য হবে। যার ফলে হাজার হাজার চটকল শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়বে। শুধু তাই নয়, আগামীদিনে ৪০ লক্ষ পাটচাষির ক্ষেত্রেও এই পরিস্থিতি বিপদ ডেকে আনবে বলে আইজেএমএ জানিয়েছে প্রধানমন্ত্রীকে।