ফের চরমে বিজেপির আভ্যন্তরীণ কোন্দল। ফেসবুকে দলের নানা পদ থেকে অব্যহতি নেওয়ার কথা ঘোষণার পর এবার বিজেপির সব হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপ ছাড়লেন বীরভূম জেলা সাধারণ সম্পাদক অতনু চট্টোপাধ্যায়। দিন চারেক আগেই বিজেপি ছেড়ে বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের হাত ধরে ঘাসফুল শিবিরে যোগ দেন আর এক জেলা সাধারণ সম্পাদক শুভ্রাংশু চৌধুরী। স্বভাবতই এই অবস্থায় জেলাজুড়ে অতনুবাবুরও তৃণমূল-যোগের জল্পনা শুরু হয়েছে। বীরভূমে ক্রমেই বিজেপির গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসছে। গত শনিবার দু’টি লোকসভা আসন ভিত্তিক বীরভূমকে দু’টি সাংগঠনিক জেলা হিসাবে ঘোষণা করা হয়। এই ঘোষণার আগে দলের জেলা সভাপতি ছিলেন ধ্রুব সাহা। তাঁকেই বীরভূম সাংগঠনিক জেলার সভাপতি করা হয়। আর আর এক সাধারণ সম্পাদক সন্ন্যাসীচরণ মণ্ডলকে বোলপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়। বিধানসভা উপনির্বাচনে নাস্তানবুদ হওয়ার পর পুরভোটের আগে সংগঠন মজবুত করতেই এই ভাগ বলে বিজেপি সূত্রের দাবি। তবে এই সাংগঠনিক ভাগ বা নয়া সভাপতির মনোনয়ন সম্পর্কে দলের জেলা নেতৃত্বের কোনও মতামতের তোয়াক্কা করেননি রাজ্য বিজেপি। তাই নতুন সভাপতিকে ঘিরে জেলায় দলের অনেকেই চরম অসন্তষ্ট। যার প্রমাণ মিলেছে সাংগঠনিক জেলা ভাগের ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই। সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করতে শুরু করেন দলের নেতা-কর্মীরা। সেখানে দলের সমস্ত দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেওয়ার কথা নিজের ফেসবুক ওয়ালে ঘোষণা করেন বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদক অতনু চট্টোপাধ্যায়।
উল্লেখ্য, দলত্যাগী নেতার এই পোস্ট মাত্রই মনে জমে থাকা সমস্ত ক্ষোভ উগরে দেন কর্মী-সমর্থকরা। অনেকেই লেখেন, বীরভূম বিজেপি এখন বোলপুরের তৃণমূল কার্যালয় থেকে পরিচালিত হয়। অনেকে অতনুবাবুর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান। তারপরই সোমবার দলের সব হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ থেকে লিভ করে যান অতনুবাবু। বিজেপির এক জেলা নেতা বলেন, সিপিএম ও তৃণমূলের রক্তচক্ষুর মধ্যেও তিনি গেরুয়া পতাকা আঁকড়ে সংগঠন চালিয়েছেন। গত পঞ্চায়েত ভোটে ময়ূরেশ্বর-১ ব্লকের সব আসনে প্রার্থী দেওয়ার মূলে তাঁর লড়াকু মনোভাবই কর্মীদের মনোবল বাড়িয়েছে। দলের জন্য মিথ্যা মামলায় জেল খেটেছেন। এখনও আদালতে তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা চলছে। তাঁর প্রশ্ন, বোলপুর জেলা সভাপতির দায়িত্ব দল কি তাঁকে দিতে পারত না? উল্লেখ্য, অতনুবাবুও রবিবার জানান, একই মুখ দেখে দেখে জেলাবাসী ক্লান্ত। এরপরই তাঁর দলের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ত্যাগ জল্পনা বাড়িয়েছে। অতনুবাবু বলেন, আমি দলের সব পদ থেকে অব্যাহতি নিয়েছি। তাই আর কোনও খোঁজ রাখতে চাই না। সেজন্য বিজেপির সব হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ লেফ্ট করেছি। তবে এখনই অন্য দলে যাচ্ছি না। প্রতিক্রিয়া জানতে বীরভূম সাংগঠনিক জেলা সভাপতি ধ্রুব সাহাকে ফোন করা হলে তিনি কল রিসিভ করেননি। বোলপুর সাংগঠনিক জেলার নয়া সভাপতি সন্ন্যাসীচরণ মণ্ডল ‘মিটিংয়ে আছি’ বলে মোবাইল সংযোগ কেটে দেন। এ সম্পর্কে অনুব্রতবাবু বলেন, “ওই দলের নেতা-কর্মীরাও বুঝতে পারছেন বিজেপি মানুষের কথা ভাবে না। ওরা আদানি, আম্বানিদের কিসে ভালো হবে তার চিন্তা করে। ফলে, যা হওয়ার তাই হচ্ছে। কেউ মানুষের জন্য কাজ করতে চাইলে পার্টিতে আলোচনা করে তাঁকে নেওয়া ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে।”
