প্রতিবছর অসংখ্য বাঙালি উত্তরাখণ্ড যান। করোনার প্রকোপ কমতে এবারও তার অন্যথা হয়নি। এবার সেই দলে ছিলেন দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্টের কর্মচারী সৌরভ দত্ত এবং তাঁর পরিবারও। তবে দেবভূমিতে গিয়ে বড়সড় বিপত্তির মুখে পড়তে হল তাঁদের। গত, ২০ ডিসেম্বর সন্ধে সাড়ে পাঁচটায় উত্তরাখণ্ডের ভীমতালে জল ঢোকার ফলে কয়েক মিনিটের মধ্যেই কাত হয়ে উল্টে যায় সৌরভবাবুদের নৌকো। ওই নৌকোয় তিনি ছাড়াও ছিলেন তাঁর ৭৪ বয়সী মা অঞ্জু দত্ত এবং দিল্লীনিবাসী ভায়রাভাই শমিত দাস। একপ্রকার জীবন জয় করেই রবিবার দুর্গাপুর ফিরেছেন সৌরভবাবুরা।
জানা গিয়েছে, সৌরভের একমাত্র সন্তান পিএইচডি করছেন নিউইয়র্কে স্টেটের সিরাকিউজ ইউনিভার্সিটিতে। গত ১৬ ডিসেম্বর ছিল তাঁর জন্মদিন। তাই সেদিন নিউ ইয়র্ক থেকে দিল্লীতে আসেন তিনি। অন্ডাল থেকে বিমানে দিল্লী যান সৌরভ, তাঁর স্ত্রী এবং মা। বিমানবন্দরে আসেন শ্যালিকা ও ভায়রাভাই। দুটো দিন দিল্লীতে থেকে উত্তরাখণ্ডের বিভিন্ন জায়গা ঘুরবেন বলে রওনা দেন ছ’জন। ২০ তারিখ সন্ধ্যায় ভীমতালে নৌকো বিহারে নামেন তাঁরা। যখন বোটে উঠছিলেন তখন আলো ছিল। কিছুক্ষণের মধ্যেই নিকষ অন্ধকার নেমে আসে। একটি বোটে ছিলেন সৌরভের স্ত্রী, শ্যালিকা, ছেলে, অন্যটিতে তাঁরা তিন জন।
সৌরভবাবু বলেন, ‘কিছুটা যাওয়ার পরেই মা বলেন জল ঢুকছে। পা ভিজে যাচ্ছে। শমিতও তাই বলেন। কিন্তু আমি গা করিনি। মাঝিভাইও বলছিলেন, টেনশনের কিছু নেই। নিজেদের মধ্যে এসব নিয়ে কথা বলতে বলতেই পায়ের পাতা ডুবে যাওয়ার মতো জল উঠে যায়। তখন আমাদের বাকি তিন জনকে নিয়ে অন্য নৌকোটি কিছুটা দূরে। তারপর কয়েক মিনিটও যায়নি, উল্টে যায় আমাদের নৌকোটি।’ সৌরভবাবু জানান, তাঁর মা এবং ভায়রাভাই লাইফ জ্যাকেট পরে ভেসেছিলেন। কিন্তু তাঁর লাইফ জ্যাকেটটি গায়ে ফিট না হওয়ায় আনলক ছিল। তাই সেটা হাতে ধরে ছিলেন তিনি।
এরপর হইচই হতেই দূরের আইল্যান্ডের কাছে দাঁড়ানো বেশ কিছু বোট সৌরভবাবুদের দিকে এগিয়ে আসে বলে জানিয়েছেন তিনি। কোনও রকমে বৃদ্ধা মাকে একটি নৌকোয় তোলা হয়। বাকি দুটো নৌকো হাত দিয়ে ধরেন সৌরভ ও শমিত। তাঁদের টানতে টানতে আইল্যান্ড পর্যন্ত নিয়ে যান মাঝিরা। সেখান থেকে এক এক জনকে এক একটি নৌকোয় তুলে মূল ঘাটে আনা হয়। তারপর তাঁরা পৌঁছন হোটেলে। একপ্রকার মৃত্যুর মুখ থেকেই বেঁচে ফিরেছেন সৌরভ দত্ত, মঞ্জু দত্তরা। সৌরভ, তাঁর মা মঞ্জুদেবী শারীরিক ভাবে সুস্থই রয়েছেন। তবে তাঁদের মন থেকে এখনও আতঙ্ক দূর হয়নি।