কোভিড অতিমারীকালে বেশ কিছু স্পেশাল যাত্রীবাহী ট্রেনে তুলনায় বেশি ভাড়া দিয়ে টিকিট কেটেছেন মানুষ। শেষমেশ এ কথা স্বীকার করে নিল কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রক। রেল বোর্ড জানাল, করোনার সময় বহু স্পেশাল ট্রেনেই কার্যকর হয়েছে স্পেশাল চার্জ। স্বাভাবিকভাবেই রেলমন্ত্রকের এহেন বক্তব্যকে তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। এই ইস্যুতে রেল বোর্ডের উপর চাপও বৃদ্ধি করছে ট্রেন যাত্রীদের একটি বড় অংশ। তাদের দাবি, অবিলম্বে ট্রেনের সেকেন্ড ক্লাস অথবা জেনারেল কামরায় সংরক্ষিত শ্রেণীর টিকিট বিক্রি বন্ধ করা হোক। পরিবর্তে করোনা-পূর্ব সময়ের মতোই চালু হোক অসংরক্ষিত শ্রেণির টিকিট বিক্রি। যদিও রেল বোর্ড স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, করোনা পরিস্থিতির দিকে নজর রেখে আপাতত ট্রেনের সেকেন্ড ক্লাসে সংরক্ষিত শ্রেণির টিকিট কেটেই সফর করতে পারবেন যাত্রীরা। অর্থাৎ, আপাতত ট্রেনের সেকেন্ড ক্লাস অথবা জেনারেল কামরা রিজার্ভড কোচ হিসেবেই পরিগণিত হবে। যার অর্থ, এই কোচের টিকিট কাটতে আগের তুলনায় এখনও বেশি টাকাই ভাড়া দিতে হবে সাধারণ যাত্রীদের।
প্রসঙ্গত, করোনা পরিস্থিতির মোকাবিলায় দেশজোড়া লকডাউনে ২০২০ সালের ২৩ মার্চ থেকে সারা দেশে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধ রেখেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। মাসতিনেক পর শর্তসাপেক্ষে তা চালু হলেও দীর্ঘদিন স্পেশাল যাত্রীবাহী ট্রেন হিসেবেই সেগুলি চালিয়েছে রেলমন্ত্রক। ট্রেন যাত্রীদের একটি বড় অংশের অভিযোগ ছিল, স্পেশাল ট্রেনে আগের তুলনায় বেশি ভাড়া নিচ্ছে রেল। সম্প্রতি সংসদে রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব জানিয়েছেন, “যেহেতু করোনা পরিস্থিতিতে দেশের সব জায়গায় যাত্রী চাহিদা একইরকম ছিল না, তাই তা মেনে স্পেশাল চার্জ সহ বেশ কিছু স্পেশাল যাত্রীবাহী ট্রেন, হলিডে স্পেশাল (এইচএসপি), ক্লোন ট্রেন চালানো হয়েছে।” একইসঙ্গে রেলমন্ত্রী সংসদে জানিয়েছেন, “২০১৫ সালে স্পেশাল চার্জ সংক্রান্ত যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, সেই অনুসারেই স্পেশাল যাত্রীবাহী ট্রেনে তা কার্যকর করা হয়েছে।”
যদিও মাসখানেক আগে রেল বোর্ড ঘোষণা করেছে, আর স্পেশাল ট্রেন নয়। এবার থেকে করোনা-পূর্ব সময়ের মতোই রেগুলার ট্রেন চালানো হবে। ভাড়াও হবে করোনা-পূর্ব সময়ের সমান। সরকারি তথ্যে দেখা যাচ্ছে, ২০১৫ সালের ২১শে মে যে নির্দেশিকা জারি করা হয়েছিল, তা অনুসারে মেল/এক্সপ্রেস স্পেশাল যাত্রীবাহী ট্রেনের সেকেন্ড ক্লাসে বেসিক ফেয়ারের ১০ শতাংশ এবং অন্যান্য ক্লাসে বেসিক ফেয়ারের ৩০ শতাংশ স্পেশাল চার্জ হিসেবে ধার্য করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেল বোর্ড। তবে এক্ষেত্রে স্পেশাল ভাড়ার সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন মাপকাঠিও ঠিক করে দিয়েছিল রেলমন্ত্রক। সেই অনুসারে, সংরক্ষিত সেকেন্ড সিটিংয়ে যাত্রীপিছু (টুএস) সর্বনিম্ন ১০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১৫ টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া যাবে। স্লিপারের ক্ষেত্রে এর পরিমাণ সর্বনিম্ন ৯০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১৭৫ টাকা। এসি চেয়ার কারের ক্ষেত্রে ১০০ টাকা থেকে ২০০ টাকা। এসি থ্রি টিয়ারের ক্ষেত্রে ২৫০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকা। অর্থাৎ, যাত্রীদের উপর যে চেপেছে অত্যধিক অতিরিক্ত ভাড়ার বোঝা। তা পরিষ্কার হয়েছে সরকারি তথ্যেই।