বড়দিন থেকে বর্ষবরণ পার্ক স্ট্রিট-সহ শহরের রাস্তায় ছুটে বেড়াবে দোতলা বাস। শুধু লালের বদলে নীল-সাদা রঙের দোতলা বাসের দৌড় চলবে। ঠিক লন্ডনে যেমনটা দেখা যায়, তেমন এবার এই মহানগরেও দেখা যাবে। কলকাতায় দোতলা বাস ফিরলেও তা দিয়ে প্রতিদিন যাত্রী পরিবহণ করা হবে না।
রাজ্য সরকারের লক্ষ্য সাধারণ যাত্রী পরিবহণের বদলে পর্যটন প্রসার ঘটানো। তার জন্যেই রাজ্য পর্যটন দফতর এই উৎসবের মরশুমে চালাবে দোতলা বাস। পর্যটনের লক্ষ্য সামনে রেখেই পশ্চিমবঙ্গ পরিবহণ নিগম প্রায় ৯০ লক্ষ টাকা খরচ করে দু’টি দোতলা বাস তৈরি করিয়েছিল।
বাস তৈরি করানো হয় বিশেষজ্ঞ সংস্থা জামশেদপুরের ‘বেবকো বা বিবিকো’কে দিয়ে। বাসটি তৈরি হয়েছে ভারত স্টেজ-৪ গোত্রের। তবে স্টেজ বদলের জন্য নয়া প্রযুক্তি ব্যবহার করা যাবে না।
আপাতত ৪৫ আসনের দু’টি দোতলা বাস তৈরি হয়েছে। ধাপে ধাপে মোট ১০টি দোতলা বাস নিতে চায় রাজ্য সরকার। দু’টি বাসই হুডখোলা বা ছাদ খোলা । বর্ষা বা গরমে ছাদে অস্থায়ী ছাউনি দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে নির্মাণসংস্থার সঙ্গে নিগম-কর্তাদের কথা হয়েছে।
এক্ষেত্রে বিশেষ এক ধরণের শিট ব্যবহার করা যাবে। তবে হুড খোলা ছাদেই আপাতত এই উৎসবের মরসুমে মজা পাবে শহরের মানুষ। বিশেষ করে শিশুরা যাতে আনন্দ পায়, তাই এই বাস আগামী কয়েকদিন থাকবে পার্ক স্ট্রিটে।
বহুদিন ধরেই রাজ্য সরকার কলকাতায় আবার দোতলা বাস চালাতে আগ্রহী। অনেকটা লন্ডনের সিটি ট্যুরের ধাঁচে শহরে পর্যটনের ক্ষেত্রে এই বাস ব্যবহারের কথা ভাবা হয়েছিল। এবার এই বাস দিয়ে সেই লক্ষ্য পূরণ হবে বলে মনে করছেন দুই দফতরের আধিকারিকরা।
সেই পুরনো স্মৃতি আবারও এই নতুন বাসের হাত ধরে ফিরবে বলে মনে করছেন পরিবহণ ও পর্যটন দফতরের আধিকারিকরা। দু’দিন আগেই এই দোতলা হুডখোলা বাসে চেপেছেন খোদ পরিবহণ মন্ত্রী।
ইতিহাস বলছে, কলকাতার রাস্তায় প্রথম দোতলা বাস চলে ১৯২৬ সালে। পরিবহণের জন্য স্বাধীনতার পর সিএসটিসি নামের সংস্থা তৈরি হয়। তারাই কলকাতার রাস্তায় দোতলা বাস নামায়।
১৯৯০ থেকে এই বাসের সংখ্যা ক্রমশ কমতে থাকে। একটা সময় ব্যারাকপুর, হাওড়া, বেহালা থেকে চলাচল করত এই দোতলা বাস। কিন্তু নানা সমস্যার জন্য ২০০৫-এ দোতলা বাসের রাস্তায় নামা বন্ধ হয়। এখন স্মারক হিসেবে একটি দোতলা বাস রাখা রয়েছে নিউটাউনের ইকো পাকে। তবে সেই বাসের রং বদলে ফেলা হয়েছে।
লাল থেকে নীল-সাদা হয়েছে। ডিসেম্বর, জানুয়ারি মাসে বা বিশেষ অনুষ্ঠানে রাজারহাট, নিউটাউনে চালানো হয় এই বাস। নতুন নীল-সাদা বাসে থাকছে সমস্ত আধুনিক ব্যবস্থা। থাকছে আগের চেয়ে বেশি চওড়া সিঁড়ি। তবে যাত্রী সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে তা বাসের ভেতরে করা হয়েছে।
বাসের মধ্যে থাকছে সিসি ক্যমেরা, প্যানিক বাটন। আসন আগের চেয়ে অনেক বেশি আরামদায়ক। দোতলা অংশ ঘিরে রাখা আছে স্বচ্ছ ফাইবার গ্লাস দিয়ে। কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর ‘কলকাতার যীশু’ কবিতায় দোতলা বাসের গল্প আছে। এ ছাড়া একাধিক সিনেমাতেও কলকাতার নস্ট্যালজিক এই দোতলা বাসের নানা গল্প রয়েছে।