কলকাতা পুরভোটে দল খুব একটা ভাল কিছু করবে, এমন আশা বিজেপি-র অতি বড় সমর্থকও হয়তো করেনি৷ কিন্তু কলকাতার পাঁচ আসনেও পদ্মফুল ফুটবে না, এতটাও খারাপ ফল হয়তো কল্পনা করেননি রাজ্য বিজেপি নেতারা৷ কিন্তু ফল যে খারাপ হবে, সেই জন্য ভিতরে ভিতরে প্রস্তুতই ছিল দলের রাজ্য নেতৃত্ব৷ পুরভোট নিয়ে রাজ্য বিজেপি-র কী প্রত্যাশা ছিল, তা ফল প্রকাশের পর দলের প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের ছোট্ট প্রতিক্রিয়াতেই পরিষ্কার৷ রাখঢাক না করেই দিলীপ বলেছেন, ‘যা হওয়ার ছিল, তাই হয়েছে৷’
শুধু তৃণমূলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস, গায়ের জোরে ভোট করানোর অভিযোগ, এই বিপর্যয়ের পিছনে নিজেদেরই একাধিক গলদ দেখছেন রাজ্য বিজেপি-র নেতারা৷ বিপর্যয়ের প্রথম এবং প্রধান কারণ হিসেবে রাজনীতির ময়দানে না থেকে আদালতের উপরে অতি নির্ভরশীল হয়ে পড়াকেই দায়ী করছেন রাজ্য বিজেপি নেতাদের একাংশ৷
পুরভোটের বিজ্ঞপ্তি ঘোষণার দিন থেকেই কার্যত আইনি লড়াইয়ে নেমে পড়েছিলেন রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব৷ কখনও একসঙ্গে সব পুরসভায় ভোটের দাবি, কখনও আবার কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাবিতে হাইকোর্ট থেকে সুপ্রিম কোর্টে দরবার করেছে বিজেপি৷ দলের নেতাদেরই একাংশ মনে করছেন, আসলে মাঠে ময়দানে নেমে রাজনৈতিক লড়াই করে ভোটে তৃণমূলের মোকাবিলা করার বদলে আদালতের রায়ের উপরেই বেশি ভরসা করেছেন দলের নেতারা৷ আর নিচু স্তরের কর্মীরাও আদালতের রায়ের অপেক্ষায় বসে থেকেছেন৷
বিজেপি নেতৃত্বের একাংশই স্বীকার করে নিয়েছেন, আসলে পুরভোটের জন্য এখন প্রস্তুতই ছিল না দল৷ আর সেই কারণেই আদালতের দ্বারস্থ হয়ে যেন তেন প্রকারে ভোট আটকানো বা পিছিয়ে দেওয়াই ছিল অন্যতম উদ্দেশ্য৷ অথচ প্রাক ২০১৯ পর্বে তৃণমূলের বিরুদ্ধে মাঠে ময়দানে নেমে লাগাতার আন্দোলন করেই মমতা বা তৃণমূল বিরোধী ভোটারদের আস্থা অর্জন করেছিল গেরুয়া শিবির৷
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের দাবি, এ বার রাজনৈতিক লড়াই থেকে সরে গিয়ে বিজেপি আইন আদালতে লড়াইয়ে যেভাবে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল, তা দেখে সেই ভোটাররাও আর সম্ভবত তৃণমূলের বিরোধী শক্তি হিসেবে বিজেপি-র উপরে আস্থা রাখতে পারেননি৷