দলের ঊর্ধ্বে কেউ নয়। তাই দলীয় নির্দেশ অগ্রাহ্য করে মনোনয়ন প্রত্যাহার না করায় আগেই তাঁকে বহিষ্কার করেছিল তৃণমূল। এবার জবাব দিল এলাকার মানুষও। ৭২ নম্বর ওয়ার্ডে নির্দল প্রার্থী হিসেবে লড়ে পরাজিত হয়েছেন তিনি। তবে শ্বশুরের পরাজয় ঘটলেও ৭২ নং ওয়ার্ডে তৃণমূলের টিকিটে জয় পেয়েছেন তাঁর জামাতা। কথা হচ্ছে সচ্চিদানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অরূপ চক্রবর্তীর।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার ফলাফল ঘোষণার পর দেখা গিয়েছে, ১,৬০০ ভোটে হেরেছেন সচ্চিদানন্দ। তাঁর এই হার যে একেবারে অপ্রত্যাশিত ছিল, তা নয়। প্রবীণ রাজনীতিক নিজেও সম্ভবত ভাবেননি তিনি জিতে যাবেন। পক্ষান্তরে, তাঁর জামাতা অরূপ জিতেছেন। গণনার প্রথম পর্যায়ে অরূপ খানিকটা পিছিয়ে গিয়েছিলেন ওই ওয়ার্ডের বাম প্রার্থীর বিরুদ্ধে। কিন্তু রাউন্ড বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গেই তিনি এগিয়ে যেতে থাকেন। গণনার শেষে দেখা যায় মাত্র ২৭৯ ভোটে জিতেছেন তিনি। তবে ওই ওয়ার্ডটি গত সাড়ে তিন দশক ধরে বামফ্রন্টের দখলে ছিল। সেদিক দিয়ে দেখতে গেলে কম ব্যবধানে হলেও রূপের জয় তাৎপর্যপূর্ণ। অন্যদিকে, সচ্চিদানন্দ হারলেও দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন।
উল্লেখ্য, ৭২ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলর সচ্চিদানন্দ ওরফে তৃণমূলের ‘মনুয়াদা’ এক সময়ে কলকাতা পুরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন। ছিলেন দক্ষিণ কলকাতার জেলা তৃণমূল সভাপতিও। কিন্তু বিরোধীদের উত্থানের দায় নিজের কাঁধে নিয়ে জেলা তৃণমূল সভাপতির পদ ছাড়েন তিনি। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে সে বার মমতার কেন্দ্রে বিজেপির ভোট বেড়েছিল। তবে একুশের ভোটে দলের হাল ফেরায় সচ্চিদানন্দ আশা করেছিলেন, দল তাঁকে ফের কাউন্সিলরের টিকিট দেবে। কিন্তু তা হয়নি। তৃণমূলের প্রার্থী তালিকায় ৭২ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয় তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীর ভাই সন্দীপ রঞ্জন বক্সীর নাম।
এরপরেই ক্ষুব্ধ সচ্চিদানন্দ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, নিজের ওয়ার্ডে নির্দল হয়ে লড়বেন। তৃণমূল অবশ্য সচ্চিদানন্দের সঙ্গে কথা বলে সমঝোতায় আসতে চেয়েছিল। দলের পক্ষ থেকে প্রাক্তন মেয়র ফিরহাদ হাকিম, মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, বিধায়ক মদন মিত্র এবং জেলা তৃণমূলের সভাপতি দেবাশিস কুমার কথা বলেছিলেন সচ্চিদানন্দের সঙ্গে। এমনকি, ছোট জামাই অরূপকেও পাঠানো হয়েছিল শ্বশুরমশায় সচ্চিদানন্দের সঙ্গে কথা বলে প্রার্থী পদ প্রত্যাহারের অনুরোধ জানাতে। কিন্তু প্রবীণ রাজনীতিক জানিয়ে দিয়েছিলেন, তিনি তাঁর অবস্থান থেকে নড়বেন না। অবশেষে দলের নির্দেশ না মানায় অবশেষে তৃণমূল থেকে বহিষ্কার করা হয় সচ্চিদানন্দকে।