কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের আনা নয়া ৩ কৃষি আইনের বাতিলের দাবিতে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে খোলা আকাশের নীচে আন্দোলন চালাতে হয়েছে দেশের অন্নদাতাদের। শুধু তাই নয়। দাবি আদায়ে প্রাণও দিতে হয়েছে ৭০০ আন্দোলনকারী কৃষককে। এবার সেই বিজেপিই নাকি কলকাতা পুরভোটের ঠিক আগে সিঙ্গুরে দলবেঁধে কৃষক আন্দোলন করছে! তাও আবার এলাকার সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়ের অনুপস্থিতিতে। দলীয় কর্মসূচীতে স্থানীয় বিজেপি সাংসদ নেই কেন? এই প্রশ্নে আগে থেকেই অস্বস্তি ছিল বিজেপি শিবিরে। বুধবার সেই অস্বস্তি বেড়ে গেল খোদ লকেটের তোলা প্রশ্নে।
লকেট বলেন, ‘এখন কলকাতা পুরভোটের প্রচার চলছে। সংসদে অধিবেশনও চলছে। এই সময়ে সিঙ্গুরে কেন ধর্না কর্মসূচী নেওয়া হল আমি জানি না। আমার মনে হয় আর ক’টা দিন অপেক্ষা করে শীতকালীন অধিবেশন শেষে আমি রাজ্যে ফিরলে এই কর্মসূচী নেওয়া যেত।’ প্রসঙ্গত, বিজেপির তিন দিনের ধর্না কর্মসূচীর প্রথম দু’দিন তেমন সমাগমও হয়নি সিঙ্গুরে। ‘কৃষক বিক্ষোভ’ নাম দেওয়া হলেও কৃষকদের উপস্থিতি ছিল না। ধর্নার প্রথমদিন দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, তাঁর দুই পূর্বসূরি দিলীপ ঘোষ, রাহুল সিংহেরা ছিলেন সিঙ্গুরে। ছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও। তবে দ্বিতীয় দিনে একাই ছিলেন সুকান্ত। মঙ্গলবারের থেকেও কম ছিল বুধবারের সমাগম।
লকেট অনুগামীদের দাবি, এলাকার সাংসদকে এড়িয়ে কর্মসূচী নেওয়াতেই সাফল্য এল না। আগে থেকে পরিকল্পনা করলে এমন ভাবে দলের মুখ পুড়ত না। তাঁদের আরও দাবি, এই কর্মসূচির কথা আগে থেকে জানানোই হয়নি হুগলির সাংসদকে। একেবারে আগের দিনে ফোনে বলা হয় সব কিছু ঠিক হয়ে যাওয়ার পরে। লকেট বলেন, ‘সংসদে আমি হুইপ রয়েছি। সেই কারণে আমার পক্ষে এখন দিল্লী ছাড়া সম্ভব ছিল না। আমি প্রধানমন্ত্রীর দফতরে চিঠি দিয়ে চারদিনের জন্য উত্তরাখণ্ডে এসেছি। সেটাও দলের নির্দেশে। আগে থাকতে কথা হলে একদিনের জন্যও সিঙ্গুরে যেতেই পারতাম। তবে আমার মনে হয়, আর কয়েকটা দিন অপেক্ষা করে সিঙ্গুরের কর্মসূচী নেওয়া যেত। এখন কলকাতা পুরভোটকেই সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া উচিত ছিল দলের।’
কলকাতা পুরভোটেও বিজেপির তারকা প্রচারকদের তালিকায় লকেটের নাম রয়েছে। কিন্তু দল পুরভোটকে গুরুত্ব দিচ্ছে না প্রশ্ন তোলা লকেট নিজেও কলকাতার কোনও ওয়ার্ডে প্রচারে যাননি। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমার সঙ্গে আলাচোনা করে নাম তালিকায় রাখা হয়নি। কিন্তু দলের অজানা নয় যে, আমি এখন উত্তরাখণ্ড বিধানসভা নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত। দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বই আমায় এই রাজ্যের সহকারী পর্যবেক্ষক নিয়োগ করেছেন। আমি মনে করি, দল যে দায়িত্ব দিয়েছে সেটাই সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়ে পালন করা উচিত। সেই কাজটাই আমি করছি।’
রাজ্য বিজেপির নেতারা অবশ্য বলছেন, লকেট ইদানীং রাজ্য রাজনীতি নিয়ে খুব একটা আগ্রহী নন। হুগলির সাংসদ লকেট বিধানসভা নির্বাচনে চুঁচুড়া আসনে পরাজিত হওয়ার পর থেকেই রাজ্যে সময় দিচ্ছেন না। এক শীর্ষ নেতার কথায়, ‘লকেট এই রাজ্যের অন্যতম সাধারণ সম্পাদকও। সেটাও দলেরই দেওয়া দায়িত্ব। কিন্তু তিনি সেটা ছেড়ে জাতীয় রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠা চাইছেন। সেই কারণেই রাজ্যের কোনও কর্মসূচিতে তাঁকে পাওয়া যাচ্ছে না।’ এই প্রসঙ্গে দিলীপের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ‘দল একটা দায়িত্ব দিলে আর একটা বাদ দিতে বলে না। দিলীপদা তো সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি। কিন্তু বাংলায় তাঁর যে দায়িত্ব রয়েছে সেটা কি তিনি অস্বীকার করছেন!’