বুধবার তামিলনাড়ুর পাহাড় ঘেরা নীলগিরির জঙ্গলেই ভেঙে পড়েছিল সেনার কপ্টার। আর সেই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন দেশের প্রথম সেনা সর্বাধিনায়ক জেনারেল বিপিন রাওয়াত। স্বাভাবিকভাবেই সেনা সর্বাধিনায়কের কপ্টার ভেঙে পড়ার ঘটনায় বিস্মিত করেছে গোটা দেশকে। প্রশ্ন উঠছে, এটি নিছকই দুর্ঘটনা না কি এর পিছনে নাশকতাও থাকতে পারে? ভিভিআইপি কপ্টারের রক্ষণাবেক্ষণ নিয়েও বিতর্ক দানা বেঁধেছে।
রাওয়াত ছাড়াও গতকালের এই ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন তাঁর স্ত্রী মধুলিকাও। সেনা ও বায়ুসেনার আধিকারিক মিলিয়ে আরও ১২ জন এই ঘটনায় মারা গিয়েছেন। তার মধ্যে রয়েছেন সিডিএসের পাঁচ নিরাপত্তারক্ষী। একজন ডিএ এবং এক এসও। ঘটনায় আহত একমাত্র গ্রুপ ক্যাপ্টেন বরুণ সিংকে কার্যত আধপোড়া অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনার উচ্চপর্যায়ের তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে ভারতীয় সেনা।
প্রসঙ্গত, দক্ষিণের পর্যটন কেন্দ্র উটি লাগোয়া পাহাড়ি উপত্যকা ওয়েলিংটনে রয়েছে ভারতীয় সেনার একটি কলেজ। সেখানের এক অনুষ্ঠানে যোগ দিতেই দিল্লী থেকে সস্ত্রীক রওনা দিয়েছিলেন রাওয়াত। সকাল ন’টায় দিল্লী থেকে তামিলনাড়ুর বায়ুসেনা ঘাঁটি সলুরের দিকে উড়ে যায় তাঁর বিশেষ বিমান। সেখান থেকে তাঁদের ১৪ জনকে নিয়ে ওয়েলিংটন উপত্যকার দিকে রওনা হয় ভারতীয় বায়ুসেনার অত্যাধুনিক রুশ হেলিকপ্টার এমআই-সেভেনটিন ভি ফাইভ কপ্টার।
এরই মধ্যে বেলা সাড়ে বারোটা নাগাদ জঙ্গলের মধ্যে থেকে একটা বিকট আওয়াজ শুনতে পান স্থানীয় বাসিন্দারা। ঘটনাস্থলে গিয়ে তাঁরা দেখেন দুমড়ে মুচড়ে পড়ে রয়েছে ভারতীয় বায়ুসেনার একটি কপ্টার। তাঁরাই প্রথমে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করেন। এরপর বেলা দুটোর খানিক আগে তামিলনাড়ুর কপ্টার দুর্ঘটনা নিয়ে প্রথম টুইট করে ভারতীয় সেনা। রাওয়াতের কপ্টার দুর্ঘটনার খবর টুইটে স্বীকার করা হয়।
সেনার এই টুইটে রাজধানীর বিভিন্ন মহলে উদ্বেগের স্রোত বইতে থাকে। কেমন আছেন চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ? তিনি জীবিত না মৃত? একইসঙ্গে নর্থ ও সাউথ ব্লকের বিভিন্ন অলিন্দে রুশ হেলিকপ্টার অত্যাধুনিক এমআই-সেভেনটিন ভি ফাইভের গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। প্রশ্ন ওঠে, কীভাবে এই ঘটনাটি ঘটল তা নিয়েও। এই আশঙ্কার মধ্যেই সন্ধে ছ’টার খানিক পরেই বিপিন রাওয়াতের মৃত্যুসংবাদ দেশবাসীকে জানায় ভারতীয় সেনা।
ইতিমধ্যেই তামিলনাড়ুতে কপ্টার দুর্ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে ভারতীয় সেনা। আজ, বৃহস্পতিবার নীলগিরির জঙ্গলে ঘটনাস্থলে যাচ্ছে সেনার বিশেষ তদন্তকারী দল। হরিয়ানা এবং পুণে থেকে ডাকা হয়েছে কেন্দ্রীয় ফরেনসিক কর্তাদের। প্রস্তুত রাখা হয়েছে এনআইএকে। দুর্ঘটনার তদন্তে সেনাকে সাহায্য করবে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা।
প্রাথমিকভাবে সেনা মনে করছে, খারাপ আবহাওয়ার জন্য এই দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। কারণ পাহাড়ি ওই এলাকায় গত কয়েকদিন ধরেই বৃষ্টি হচ্ছিল। একই সঙ্গে কপ্টারের জরুরি অবতরণের বিষয়টিকেও উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না। সেনার দাবি, আকাশে ওড়ার ১০ মিনিটে মধ্যে হয়তো কপ্টারে কোনও প্রযুক্তিগত ক্রটি ধরা পড়তে পারে। এই ব্যাপারে ডিজিটাল অ্যানালিসিস না করা পর্যন্ত কোনও উত্তর দেওয়া সম্ভব নয় বলেই দাবি ভারতীয় সেনার।