এবারের দিল্লী সফরে গিয়ে কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেননি তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর তারপর থেকেই নতুন করে তৃণমূল ও কংগ্রেসের দূরত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠছিল। এরই মধ্যে এনসিপি শীর্ষ সূত্রের খবর বুধবার মুম্বইয়ে শরদ পাওয়ার এবং মমতার বৈঠকে দু’জনেই এ বিষয়ে একমত হয়েছেন যে কংগ্রেসকে ছাড়া যেমন বিরোধী জোট হবে না, তেমনি কংগ্রেসের নেতৃত্বেও বিরোধী জোট হবে না। কংগ্রেস বিরোধী জোটে থাকবে আর পাঁচটা আঞ্চলিক দলের মতো।
তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে প্রবীণ মরাঠা নেতার আলোচনার বিষয়ে ওয়াকিবহাল এক এনসিপি নেতার ব্যাখ্যা, পাওয়ার প্রথম থেকেই বলছেন, কংগ্রেসকে ছাড়া বিরোধী জোট সম্ভব নয়। উল্টো দিকে মমতা কংগ্রেসের সমলোচনা করে আঞ্চলিক দলগুলির জোটের কথা বলছেন। আপাত ভাবে একে দু’জনের মধ্যে মতভেদ বলে মনে হলেও, আসলে দু’জনের অবস্থান একই। তা হল, কংগ্রেস জোটে থাকতে পারে। কিন্তু কংগ্রেসের হাতে নেতৃত্ব থাকবে না।
পাওয়ার বা মমতা কেউ এই কথাটি স্পষ্ট করে না বললেও, ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোর তা টুইটে লেখেন, ‘কংগ্রেস যে ভাবনা ও জায়গার প্রতিনিধিত্ব করে, তা মজবুত বিরোধী শিবিরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।’ কিন্তু কংগ্রেসের হাতে নেতৃত্ব না থাকার যুক্তি দিতে গিয়ে নাম না করে রাহুল গান্ধীকে নিশানা করে পিকে বলেন, ‘কংগ্রেসের নেতৃত্ব এক জন ব্যক্তির ঈশ্বরপ্রদত্ত অধিকার নয়। বিশেষত ওই দল যখন গত ১০ বছরে ৯০ শতাংশ আসনেই হেরেছে।’ তাঁর মন্তব্য, ‘বিরোধী জোটের নেতৃত্ব গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ঠিক হোক।’
তা কীরকম? মহারাষ্ট্রে লোকসভা কেন্দ্র ৪৮টি। বাংলা ৪২টি আসন। এই ৯০টি আসনে ‘জোট বেঁধে’ তৃণমূল, শিবসেনা ও এনসিপি লড়বে। ছত্তীসগঢ়, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, গুজরাত, হরিয়ানার মতো রাজ্যের ১২০-১৪০টি আসনে কংগ্রেস সরাসরি বিজেপির সঙ্গে লড়াই করে কতগুলি আসন নিয়ে আসতে পারে, তা দেখা হবে। বাকি আঞ্চলিক দলগুলির শক্তিও পরখ করা হবে। তার পরে কার কত সংখ্যা, কে বিরোধী জোটে চালিকাশক্তির কাজ করেছেন, তা নিয়ে আলোচনা হবে।
এনসিপি-র রাজ্যসভার সাংসদ মজিদ মেমনের মতে, মহারাষ্ট্র-বাংলা মিলিয়ে ৯০টি আসনে এনসিপি-তৃণমূলের যৌথ লড়াই বিরোধী জোটের মূল চালিকাশক্তি হয়ে উঠবে। এনসিপি সূত্রের খবর, বৈঠকে পাওয়ারকে মমতা বলেছেন, কংগ্রেস এখন দুর্বল। সে ভাবে সক্রিয়ও নয়। তাই তাদের থেকে তেমন প্রত্যাশা না রেখেই পরিকল্পনা সাজাতে হবে। সেই সঙ্গে তাঁর অভিমত, ২০২৪ সালের জন্য এখন থেকে বিরোধী-ঐক্যের ঘুটি সাজানো জরুরি। নইলে তখন শেষ মুহূর্তে মাঠে নেমে লাভ হবে না।
যদিও কংগ্রেস এখন তাঁদের বিরুদ্ধে বিজেপি বিরোধী ভোটে ভাগ বসিয়ে নরেন্দ্র মোদীর সুবিধা করে দেওয়ার অভিযোগ তুলছে। তবে তৃণমূলে রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েনের যুক্তি, মহারাষ্ট্র, তেলঙ্গানা, তামিলনাড়ুর মতো যে সব রাজ্যে বিজেপির বিরুদ্ধে শক্তিশালী বিরোধী রয়েছে, সেখানে তৃণমূল লড়তে যাচ্ছে না। ত্রিপুরা, গোয়া, মেঘালয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই ঠিকমতো হচ্ছিল না বলেই তৃণমূল সক্রিয় হয়েছে।
উল্লেখ্য, কংগ্রেস শক্তিশালী বিকল্প জোটে থাকবে কি না, সে প্রশ্নের উত্তরে বুধবার তাঁর ‘সিলভার ওক’ বাংলোয় মমতা ও অভিষেকের সঙ্গে বৈঠকের পরে পাওয়ার বলেছিলেন, কংগ্রেস হোক বা অন্য কোনও দল, যারা বিজেপির বিরুদ্ধে, তারা যদি এক সঙ্গে আসতে চায়, তা হলে সকলেই স্বাগত। মুম্বইয়ে পাওয়ার-ঘনিষ্ঠ নেতারা বলছেন, বিরোধী জোটের নেতৃত্বের রাশ হাতে থাকার মনোভাব কংগ্রেসকে ছাড়তে হবে বলে পওয়ারও আগে বুঝিয়ে দিয়েছেন। কংগ্রেসের ‘জমিদারি মনোভাব’ নিয়ে তিনি কটাক্ষ করেছেন।